অনুষ্ঠানসমূহ
সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুষ্ঠান পরিচিতি
হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর শুভ জন্ম ও ফাতেহা শরীফ
হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর বেসালে হক্ক দিবস
১৫ই জ্যৈষ্ঠ পবিত্র সূফী সম্মেলন
।
সুরেশ্বর দরবার শরীফের অনুষ্ঠান পরিচিতি
দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে লক্ষ লক্ষ ভক্ত-মুরিদানের উপস্থিতিতে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাকজমকের সাথে বছরের বিভিন্ন সময়ে পবিত্রতম কতিপয় দিবস আনুষ্ঠানিকতা সহকারে পালন করা হয়। নিজ পীর মোর্শেদ কেবলা রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর নিকট হতে খেলাফত অর্জনের পর হযরত সুরেশ্বরী রাঃ পীর মোর্শেদ-কেবলার নির্দেশক্রমে দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে ওরোছ শরীফ উদযাপন করেন। ওরোছ শরীফ এবং অন্যান্য অনুষ্ঠানে অসংখ্য ভক্ত-মুরিদানের সমাবেশ, দরূদ শরীফ, মিলাদ মাহফিল, জিকির-আজকার, ফাতিহা শরীফ, মাহফিলে সামা-কাউয়ালীর এক অপূর্ব রহমতের পরিবেশ পরিলক্ষিত হয়। ‘আল্লাহু’ ‘আল্লাহু’ জিকিরের ধ্বনিতে সুরেশ্বর দরবার শরীফের সমগ্র এলাকা এবং সংলগ্ন নিকটস্থ এলাকা ও আকাশ-বাতাস মুখোরিত হয়ে যায়। একই সঙ্গে বহু দূর-দূরান্ত হতে পণ্য সামগ্রীর পসরা সমেত হাজির হন ব্যবসায়ীবৃন্দ। আধ্যাত্মিক রাজ্যে মন কেনা-বেচার সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের বিকিকিনিও চলে সমান তালে।
।
বার্ষিক প্রধান ওরোছ শরীফ
প্রতি বছর মাঘ মাসে সপ্তাহ ব্যাপী (১৬-২২শে মাঘ) প্রধান ওরোছ শরীফ অসংখ্য ভক্ত-অনুসারীর উপস্থিতিতে ব্যাপক আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। নিজ পীর-মোর্শেদ কেবলার নির্দেশ ক্রমে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এই ওরোছ শরীফ পালন প্রথম শুরু করেন বাংলা ১২৮৪ সনে। সেই হতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট তারিখে ওরোছ শরীফ পালিত হয়ে আসছে। এই ওরোছ শরীফের প্রধান আকর্ষণ ১৯শে মাঘ পবিত্র আশা মোবারক জন সমক্ষে বের করা। এই পবিত্র আশা স্পর্শ করার মাধ্যমে ভক্তবৃন্দ মনের বাসনা ব্যক্ত করেন। যা হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর উসিলায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কবুল করে থাকেন। ২১শে মাঘ হযরত গাউসুল আযম বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী রাঃ এর নামে নেওয়াজ করা হয়। যা ভক্তবৃন্দ অত্যন্ত তাজিম ও আগ্রহের সাথে গ্রহণ করে থাকেন। সাতদিন ব্যাপী ওরোছ শরীফের প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মিলাদ শরীফ পাঠের আয়োজন থাকে। আর প্রতিটি মুহূর্তে আশেকানের জিকির-আজকারে সমগ্র এলাকা প্রকম্পিত হতে থাকে।
।
হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর শুভ জন্ম ও ফাতেহা শরীফ
দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ এর শুভ জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষে খোশরোজ শরীফ ও ফাতেহা শরীফ প্রতি বছর ২রা অগ্রহায়ণ পালিত হয়। তিনি যে দিবসে শুভ জন্ম গ্রহণ করেছেন, সেই একই দিবসে তিরোধান হন। তিনি ২রা অগ্রহায়ণ বাংলা ১২৬৩ সন মোতাবেক ১৮৫৬ খৃষ্টাব্দে শুভ জন্ম গ্রহণ করেন এবং ২রা অগ্রহায়ণ ১৩২৬ সন মোতাবেক ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে বেসালে হক্ক প্রাপ্ত হন।
প্রতি বছর এই দিবসটি যথাযথ ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে উদযাপিত হয়ে থাকে। দরূদ শরীফ, জিকির-আজকার, ওয়াজ মাহফিল, সামা-কাউয়ালী, ভক্তি সহ রওজা শরীফ গোসল করানো এবং নতুন গিলাফ ও পুষ্পমাল্য প্রদানের মাধ্যমে এই দিবসটি লাখো ভক্তের উপস্থিতিতে যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যের সাথে উদযাপিত হয়ে আসছে।
।
হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর বেসালে হক্ক দিবস
হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর পীর-মোর্শেদ কেবলা রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পবিত্র বেসালে হক্ক দিবস ২০শে অগ্রহায়ণ। এই দিবসের প্রধান অনুষ্ঠানটি পালিত হয় কলিকাতার মানিকতলায় হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর রওজা শরীফ প্রাঙ্গণে। একই সঙ্গে অত্যন্ত ভাবগম্ভীর পরিবেশে জাক জমকের সাথে এই দিবসটি পালিত হয় বাংলাদেশের ‘খানকায়ে সুরেশ্বরী’ ৩৮৫/সি, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকায়।
উপস্থিত অসংখ্য জনতার মাঝে হযরত বাবা ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর আওলাদগণ ঢাকায় এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মাহফিলের গুরুত্ব ও ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করেন। হযরত ওয়াইসী কেবলার পবিত্র জীবনী মোবারক আলোচনা-পর্যালোচনা, দিওয়ানে ওয়াইসী পাঠ, মিলাদ মাহফিল, দরূদ শরীফ, জিকির-আজকার ও ওয়াজ মাহফিল শেষে দোয়া মোনাজাত পরিচালনা করেন হযরত ওয়াইসী পাকের পবিত্র আওলাদবর্গ।
হযরত খাজা আহমদী নূরী বাংলাদেশে সর্ব প্রথম ১৯৭৯ খৃষ্টাব্দে এই পবিত্র অনুষ্ঠান আরম্ভ করে ভক্ত ও আশেকগণের মনবাসনা পূর্ণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। তারপর থেকে প্রতি বছর ২০শে অগ্রহায়ণ ঢাকার ‘খানকায়ে সুরেশ্বরী’তে নিয়মিত এই অনুষ্ঠান পালিত হয়ে আসছে।
।
১৮ই আশ্বিন খোশরোজ শরীফ
মহান আল্লাহর অলি নূরের বাদশাহ হযরত নূরশাহ রাঃ এর পবিত্র জন্ম দিবস উপলক্ষে এই দিবসটি অত্যন্ত ভাবগাম্ভীর্য ও আড়ম্বরের সাথে প্রতি বছর উদযাপিত হয়। হযরত নূরশাহ রাঃ বাংলা ১৩০০ সনের ১৮ই আশ্বিন ভুবন আলোকিত করে পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হন।
প্রতি বছর এই দিবসটি আনন্দ উৎসব পরিবেশে পালিত হয়। আশেকান ও স্থানীয় জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে এই দিনে পদ্মা নদীতে বিশেষ নৌকা বাইচের আয়োজন করে থাকেন। অতি আকর্ষণীয় নৌকা বাইচের দৃশ্য দেখার জন্য পদ্মার তীর জনারণ্যে পরিণত হয়। সৃষ্টি হয় এক অনাবিল আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশ। বাইচ শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়।
হযরত নূরশাহ রাঃ এর পবিত্র জন্ম দিবসের সুন্দর প্রভাতে বিশাল আকৃতির কেক কাটা ও বিতরণের মাধ্যমে পুণ্যময় এই দিবসটির কার্যসূচী শুরু হয়। তাঁর জীবনালেখ্য আলোচনা, মিলাদ মাহফিল ও দরূদ শরীফ পাঠ, সামা-কাওয়ালী ও জিকির-আজকার শেষে বিশেষ দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে দিবসটি যথাযথ ভাব গাম্ভীর্যের সাথে পালিত হয়। পবিত্রতম এই দিবসের প্রতিটি কর্মসূচীতে ভক্তকুলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই মহান আউলিয়ার প্রতি তাঁদের অসাধারণ ভালবাসার পরিচয় বহন করে।
।
১৫ই জ্যৈষ্ঠ পবিত্র সূফী সম্মেলন
হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ এর পৌত্র এবং হযরত নূরশাহ রাঃ এর কনিষ্ঠ পুত্র আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী প্রতিষ্ঠিত এই দিবসে সূফী মনোভাবাপন্ন অসংখ্য মানুষের আগমন ঘটে। রাসূলুল্লাহ সাঃ এর উম্মত হিসাবে আহলে সুফ্ফার আদর্শে জীবন গঠনে অনুপ্রাণিত হয়ে হাজারো মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ এই দিবসকে সাফল্যমণ্ডিত করে তোলে। প্রতি বছর ১৫ই জ্যৈষ্ঠ এই দিবসটি স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে অত্যুজ্জ্বল হয়ে উঠে।
।
৩রা অগ্রহায়ণ খোশরোজ শরীফ
পরম করুণাময়ের অসীম রহমতে জগতের আলোস্বরূপ এই ধরার বুকে আবির্ভূত হয়ে ভক্ত হৃদয়ে আনন্দের জোয়ার বহায়েছিলেন হযরত নূরশাহ রাঃ এর কনিষ্ঠ পুত্র হযরত খাজা শাহ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী ওরফে চুন্নু মিয়া শাহ মাঃ জিঃ আঃ। তিনি বাংলা ১৩৪৯ সনের ৩রা অগ্রহায়ণ সুরেশ্বর দরবার শরীফের পবিত্র ভূমিতে সুবহে সাদিকের সময়ে শুভ জন্ম গ্রহণ করেন। সেই দিনের স্মরণে ভক্তকুল মহান আল্লাহর দরবারে শুকরে স্বরূপ জিকির-আজকার, আর দরূদ শরীফের আওয়াজে মুখরিত করে দরবার শরীফ চত্বর। মিলাদ মাহফিল ও দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে দিবসটি শুরু হয়। অতঃপর মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে প্রার্থনার পর কেক কাটিয়া দরবার শরীফে আগত হাজার হাজার মানুষের মাঝে বণ্টন করা হয়। বিভিন্ন তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিবসটি পালিত হয় এবং মিলাদ মাহফিল ও দোয়া-মোনাজাতের অনুষ্ঠান করা হয়।
।
অন্যান্য নিয়মিত অনুষ্ঠান
দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে অন্যান্য যে সকল অনুষ্ঠান প্রতি বছর নিয়মিত পালিত হয়ে আসছে, তার মধ্যে শবে বরাত, শবে কদর, ঈদে মিলাদুন্নবী, ফাতিহা-ই-ইয়াজদাহম, আখেরী চাহার শোম্বা, আশুরা, শবে মিরাজ, ঈদুুল ফিতর, ঈদুল আযহা প্রভৃতি দিবস বিশেষ আনুষ্ঠানিকতা সহকারে পালন করা হয়। চান্দ্র তারিখ ভিত্তিক এই সকল অনুষ্ঠান স্থানীয় ভাবে চাঁদ দেখার পরিবর্তে বিশ্বে প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে পালন করা হয়। সবচেয়ে আনন্দের বিষয় যে, বাংলা নববর্ষ ১লা বৈশাখের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানও অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করা হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মতো এই দিনেও জিকির আজকার ও দরূদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। তবে বাংলা নববর্ষ ১লা বৈশাখের অনুষ্ঠান হওয়ায় এই দিনে বিশেষ তাবাররুক ও ফল-ফলাদি দ্বারা আপ্যায়ন করা হয়।