আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ

.

উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত অলিয়ে কামিল, বেলায়েত গগনের সূর্য অলিকুল শিরোমণি শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এর পৌত্র এবং হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরশাহ্ রাঃ ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল হাই রাঃ এর সর্ব কনিষ্ঠ পুত্র হযরত খাজা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী ওরফে চুন্নু মিয়া শাহ্ মাঃ জিঃ আঃ। তিনি বর্তমানে দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের প্রধান গদিনশীন পীর ও মোন্তাযেমে দরবার শরীফের পদে অধিষ্ঠিত হয়ে দরবার শরীফের সার্বিক কার্যক্রম সুচারু রূপে সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন। তিনি ১৯৪৩ খৃষ্টাব্দের ১৮ই নভেম্বর মোতাবেক বাংলা ১৩৫০ সনের ২রা অগ্রহায়ণ দিবাগত রাতে সুবহে সাদিকের সময় বরুণ ক্ষণে উত্তর-ফাগুনী নক্ষত্রে ভুবন আলোকিত করে ধরনীর বুকে আবির্ভূত হন।

যাঁর পবিত্র ঔরসে তিনি এ মায়াময় পৃথিবীতে আগমন করেছেন, তিনিও জগদ্বিখ্যাত আল্লাহর অলি হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরশাহ্ ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল হাই রাঃ। তাঁর মাতার নাম আলহাজ্জ্ব হযরত সৈয়্যেদা বেগম আশরাফুন্নেছা রাঃ। হযরত খাজা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ হলেন আওলাদে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক উজ্জ্বল বংশধর।

তাঁর পিতৃকুলের ঊর্ধ্বতন প্রসিদ্ধ আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ মানিক শাহী ফরিদপুরী এবং সপ্তম পুরুষ আলহাজ্জ্ব হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ দীদার উল্লাহ সাহেব রাঃ মদিনা মুনাওয়ারা থেকে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বর্তমান ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ভারত হয়ে বাংলাদেশে আগমন করেন। তাঁর পূর্ব পুরুষগণ প্রত্যেকে ছিলেন জ্ঞান সাধনায় ও আধ্যাত্মবাদে জগদ্বিখ্যাত আল্লাহর অলি ও আধ্যাত্মিক পথের দিশারী। তাঁরা জ্ঞানে-গুণে, শিক্ষা-দীক্ষায়, আভিজাত্যে ছিলেন অনন্য।

হযরত খাজা শাহ্ সূফী আহমদীনূরী এমনই এক বিশ্ব পরিস্থিতিতে পৃথিবীর বুকে আবির্ভূত হন যা ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল রূপে পরিদৃষ্ট হয়। তাঁর আগমনই যেন পৃথিবীর বুকে বয়ে আনলো কল্যাণ বার্তা। দূর হলো ক্ষুধা-মন্দা, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও অশান্তির অমানিশা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান ও তদানীন্তন ভারত বর্ষের পূর্ববঙ্গ (বর্তমান বাংলাদেশ) থেকে ১৯৪৩ মোতাবেক বাংলাতে ’৪৯-এর মন্বন্তর দূর হয়ে বাংলার মাঠ-প্রান্তর শস্য-শ্যামলিমায় পূর্ণ হলো আর বন-বনানী ফুলে ফলে ভরে গেল।

সে দিনটি ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এক অপূর্ব নিদর্শন।  দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর পবিত্র খোশরোজ শরীফ এবং সালিয়ানা ফাতেহা শরীফের দিন ২রা অগ্রহায়ণ। সেই পবিত্রতম দিনটিই মহান সূফী সাধক আল্লাহর অলি হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এই ধরনীতে আগমন করেছিলেন এবং একই দিনে তিরোধান হন। সেই দিনের স্মরণে প্রতি বছর অসংখ্য ভক্ত-মুরীদানের সমাবেশ ঘটে সুরেশ্বর দরবার শরীফে। ভক্তকুলের উপস্থিতিতে পবিত্রতম সেই দিবাগত রাতে সুবহে সাদিকের শুভ লগ্নে মায়ের কোল আলোকিত করে ধরনীকে ধন্য করেন নবজাতক। নবজাতকের কুসুমকান্তি আলোকোজ্জ্বল চেহারা দেখে সবাই বিমুগ্ধ। পূর্ণ চন্দ্রের হাসিভরা মুখ দর্শন করে তাঁরা নবজাতক সম্পর্কে উচ্চ প্রশস্তি ব্যক্ত করেন। ক্ষুদ্র কিশলয় সময়কালে বিশাল মহীরুহের আকার ধারণ করবে তা সেদিনেই আঁচ করা গিয়েছিল।
হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ এর আগমনের পূর্বাভাস তাঁর মাতাজান স্বপ্ন যোগে জানতে পেরেছিলেন। এ ছাড়া রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ ও হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ তাঁর আগমনবার্তা পূর্বাহ্নে জানিয়েছিলেন।

তাঁর আগমনের পূর্বে হযরত নূরশাহ্ রাঃ এর ষষ্ঠ পুত্র হযরত সোনা মিয়া শাহ্ রাঃ মাত্র এক বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। এতে হযরত নূরশাহ্ রাঃ অত্যন্ত দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে দিনাতিপাত করছিলেন। তখনই তাঁকে সান্তনার বাণী স্বরূপ হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ ও হযরত সুরেশ্বরী রাঃ জানালেন, আহমদীনূরীর শুভাগমন বার্তা। দরবার শরীফের বিশিষ্ট খলিফাগণ কাশফ, ইলহাম ও স্বপ্নযোগে এই খোশ খবরী জেনেছিলেন এবং হযরত নূরশাহ্ রাঃও হযরত আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ সম্পর্কে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত দান করেছিলেন। তাতে সকলে বুঝতে পারলেন যে, এ মহান শিশুর মর্যাদা অতি উঁচু ও সমুন্নত।

হযরত নূরশাহ্ রাঃ কনিষ্ঠ পুত্র হযরত চুন্নু মিয়া শাহকে সব সময় নিজের সঙ্গে রাখতেন। তাঁকে তিনি বিশেষ নজরে প্রতিপালন করেন। বাল্যকালে হযরত আহমদীনূরী ছিলেন কিছুটা ব্যতিক্রম প্রকৃতির। অপ্রয়োজনে কোন কথা বলতেন না। কারো সাথে কখনো ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হতেন না। তাঁর যুক্তি পূর্ণ কথাবার্তা সকলকে চমৎকৃত করত। তিনি বুযুর্গ পিতা-মাতার কাছে বাল্য শিক্ষা সমাপ্ত করেন। এ ছাড়া দরবার শরীফের প্রখ্যাত আলিমদের নিকটও শিক্ষা গ্রহণ করেন। হযরত খাজা আহমদীনূরী নিজ পিতা কেবলার পবিত্র হস্তে অতি অল্প বয়সে বায়াত গ্রহণ করেন। তরিকত গ্রহণ করার প্রথম থেকেই একে একে দশ লতিফা জারি হয় এবং তিনি মোর্শেদ পাকের গুরুত্বপূর্ণ এরশাদ লাভ করেন। নিজ পিতা ও মোর্শেদ পাকের কাছেই তিনি ইলমে তাসাউফ শিক্ষা লাভ করেন এবং মোর্শেদ পাক তাঁকে পুণ্যময় ‘আহমদীনূরী’ লকব প্রদান করেন।

কালের প্রবাহে বাংলা ১৩৬১ সনের ভাদ্র মাসে অপ্রত্যাশিত প্লাবন হয়। পদ্মার দু’কূল ছাপিয়ে পানি অনেক উপরে উঠে আসে। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। এমনি বর্ষার সময়ে ১৩৬১ সনের ৫ই ভাদ্র দয়াল পাক হযরত নূরশাহ্ রাঃ বেসালে হক্ক প্রাপ্ত হন। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি পবিত্র ‘অসিয়তনামা’ রেখে যান। তিনি আওলাদগণকে দরবার শরীফের খেদমতে আত্মনিয়োগ করার জন্যে উপদেশ দিয়ে যান। আওলাদগণের মধ্যে সর্ব কনিষ্ঠ আওলাদ হযরত চুন্নুমিয়া শাহকে তিনি অত্যন্ত স্নেহ করতেন। পিতার ওফাতকালে আওলাদগণের মধ্যে হযরত লালমিয়া শাহ্ ও হযরত চুন্নুমিয়া শাহ্ পিতার সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন। পুত্রদ্বয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে তিনি ভক্তদের নির্দেশ দিলেন, “আমার স্নেহের লালমিয়া ও চুন্নুমিয়াকে তোমাদের নিকট রেখে গেলাম। এদের নিকট আসলেই আমাকে পাবে।” এর পর থেকে হযরত নূরশাহ রাঃ এর সকল ভক্ত সব সময় তাঁদের অনুগত থাকতো। ওফাতের পূর্বে হযরত নূরশাহ রাঃ স্বীয় পবিত্র আঙ্গুলে ব্যবহৃত আংটি মোবারক স্নেহের নিদর্শন স্বরূপ চুন্নুমিয়া শাহকে দান করে যান এবং বিদ্যার্জন ও রিয়াযতের মাধ্যমে নিজকে প্রস্তুত ও সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে দরবার শরীফ পরিচালনার কাজে নিয়োজিত থাকার নির্দেশ দান করেন।

মাত্র এগার বার বছর বয়সে পিতা কেবলাকে হারিয়ে হযরত চুন্নুমিয়া শাহ্ অত্যন্ত শোকাভিভূত হলেন। সেই শোক তাঁকে যোগালো অপূর্ব শক্তি। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে তিনি দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলেন। সংগ্রামের মাধ্যমে এক সময় সাফল্য মন্ডিত হলেন। তিনি প্রথম জীবনে পারিবারিক শিক্ষা সমাপ্ত করে ঢাকা মাদ্রাসা-ই-আলিয়ায় ভর্তি হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আরম্ভ করেন। অতঃপর স্কুল, কলেজ পেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাষ্টার্স ডিগ্রী লাভ এবং আইন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। পরবর্তী পর্যায়ে তিনি পূর্ণমাত্রায় তরিকত প্রচারে আত্ম নিয়োগ করেন। উচ্চ পদস্থ সরকারী চাকরির সুযোগ পাওয়া সত্ত্বেও তিনি সে সুযোগের সদ্ব্যবহার না করে নিজেকে সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহর কাজেই নিয়োজিত রাখেন। ধর্ম প্রচারের স্বার্থে তিনি ক্রমাগত দেশ-দেশান্তরে ছুটে চলেছেন।

বিশ্ব মানবতা বোধ জাগ্রত ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা এবং আধ্যাত্মিকতার আলোকে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তিনি পূর্ব পুরুষদের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ‘বিশ্ব আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও গবেষণা ফাউন্ডেশন’ নামের আন্তর্জাতিক মানের সংগঠনটির পরিচালনা ও প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করেন। তিনি এ সংগঠনের প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠিত থেকে সংগঠন পরিচালনার স্বার্থে স্বস্ত্রীক এশিয়ার সৌদী আরব, দুবাই, ভারত, ইরান, জাপান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইউরোপের ফ্রান্স, বৃটেন, ইতালি এবং আমেরিকা, কানাডা কয়েক বার ভ্রমণ করেন। ধর্মের বাণী ও আধ্যাত্মিক দীক্ষা এবং চিন্তা ধারা সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টায় তিনি সর্বোতভাবে নিযুক্ত রয়েছেন।

হযরত খাজা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী অত্যন্ত অনাড়ম্বর জীবন যাপনে অভ্যস্ত। তিনি মিষ্টভাষী, বন্ধু বৎসল এবং অতিথি পরায়ণ। যিনি একবার তাঁর সাক্ষাতে এসেছেন তিনিই মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি অত্যন্ত উদার প্রকৃতির মানুষ। সব সময় মধ্যপন্থা অবলম্বন ভালবাসেন। কোন ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পছন্দ করেন না। জাতি, ধর্ম, গোত্র, পেশা, উঁচু-নীচু, ধনী-নির্ধন সকল শ্রেণীর মানুষ যারাই তাঁর সান্নিধ্যে এসেছেন, তাঁর ভালবাসায় আপ্লুত ও বিমুগ্ধ হয়েছেন।

হযরত খাজা আহমদীনূরী পিতা কেবলার অসিয়ত থেকে বিন্দুমাত্র বিচ্যুত হননি। উচ্চ শিক্ষা অর্জনের পাশাপাশি তিনি উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক সাধক রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর সহিত আত্মিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজ জীবন ধন্য করেন। দিবারাত্র সর্বক্ষণ হযরত ওয়াইসী কেবলার প্রেম-ভালবাসায় সকল কাজ সম্পন্ন করেন। তিনি তাঁর আওলাদগণের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং অতি মর্যাদা ও সম্মানের সাথে তা রক্ষা করছেন। তাঁর ন্যায় হযরত ওয়াইসী কেবলার আশেক আর দেখা যায় না। তিনি রাসূলনোমা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর কলিকাতাস্থ রওজা শরীফের সংস্কার কাজ এবং সেখানকার প্রধান তোরণ ও মার্বেল পাথরের রাস্তা এবং হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর অন্যতম বিশিষ্ট ৩৫ জন খলিফা হুযুরদের নামফলক নির্মাণ করেন। তিনি হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পবিত্র জন্মস্থান চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় প্রধান সড়কের পাশে একটি তোরণ নির্মাণ করেছেন যাতে অন্যান্য ভক্ত-অনুসারী যারা এখানে জেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসবেন তারা সহজে মহান অলির জন্মস্থান চিনতে পারেন। তাছাড়া তিনি হযরত ওয়াইসী কেবলার স্মরণে ময়মনসিংহ জেলার শম্ভুগঞ্জে দরবারে ওয়াইসীয়া প্রতিষ্ঠা করেছেন।
হযরত খাজা আহমদীনূরী ১৯৯৬ খৃষ্টাব্দে রাসূলনোম আল্লামা হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী কেবলার মাজার শরীফ ও তাঁহাদের খলিফাদের লেখনী সম্বলিত তথ্য সংগ্রহ ও হযরত ওয়াইসী পীরের মাজার শরীফের সংস্কারে সহযোগিতার জন্য রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী এওয়ার্ড লাভ করেন। হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর উপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার কারণে ১৯৮৬ খৃষ্টাব্দ হতে কলিকাতাস্থ হযরত ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশন প্রতিবছর এই এওয়ার্ড প্রদান করে আসছে।

রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ লিখিত ফারসী ভাষার মহাগ্রন্থ পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’র বঙ্গানুবাদ তিনি ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছেন। কিতাব খানির বঙ্গানুবাদ করেন হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী হুযুরের পৌত্র আলহাজ্জ্ব হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রাঃ। তাহা ব্যতীত তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রচেষ্টায় মূল ফার্সী ভাষায় রচিত দিওয়ানে ওয়াইসী ৪র্থ সংস্করণ মুদ্রণ করেছেন। প্রকাশ তারিখ ছিল হযরত ওয়াইসী কেবলা রহ. এর পবিত্র ফাতেহা শরীফ উপলক্ষ্যে ৬ ডিসেম্বর ২০১৫। অতঃপর ১০ জানুয়ারি ২০১৬ কলিকাতা প্রেসক্লাবে সেখানকার স্থানীয় মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সাংবাদিক, কলিকাতা ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দের উপস্থিতিতে পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসীর ৪র্থ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন ও প্রকাশনা উৎসবের মাধ্যমে গ্রন্থটি সকলের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষ্যে কলিকাতা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রকাশক আলহাজ্জ্ব শাহ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী মা.জি.আ.কে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে।

তিনি দরবার শরীফের উন্নয়নকল্পে প্রতিটি মুহূর্ত সচেষ্ট রয়েছেন। পিতা কেবলা হযরত হযরত নূরশাহ্ রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক নির্মাণ, সুরেশ্বর দরবার শরীফের বৃহদাকার মসজিদের পুনঃ নির্মাণ, হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এর শ্রদ্ধেয় পিতা হযরত শাহ্ সূফী সাফী হাজ্জীউল হারামাইন আশ-শরীফাইন সৈয়্যেদ মুহাম্মদ মেহের উল্লাহ রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক এবং হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর কনিষ্ঠ ভ্রাতা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ নয়ান শরীফ শাহ্ রাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক নির্মাণ কার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। হযরত খাজা আহমদীনূরী কখনো নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বা ভবিষ্যতের ভাবনা না ভেবে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে দরবার শরীফের সমগ্র কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।

দয়াল পাক হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ রচিত কিতাব সমূহ পুনঃ প্রকাশের লক্ষ্যে তিনি সর্বদা উদগ্রীব থাকেন। এ লক্ষ্যে তিনি দিবা-রাত্র অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর লেখা নয়খানা কিতাবের মধ্যে হযরত খাজা আহমদীনূরী এ পর্যন্ত তিন খানা কিতাব যথা ‘নূরেহক গঞ্জেনূর’, ‘মদিনা কলকি অবতারের ছফিনা’, ‘ছফিনায়ে ছফর’ পুনঃ প্রকাশ করেন। ‘সিররে হক্ক জামে নূর’ গ্রন্থের পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেছেন। ‘লতায়েফে শাফিয়া’, ‘মাতলাউল উলূম’ ও ‘আইনাইন’ মূল কিতাব ও বঙ্গানুবাদ প্রকাশের কার্যক্রম চলছে তাঁরই সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে। হযরত খাজা আহমদীনূরী প্রতিটি কিতাব প্রকাশের পট ভূমিকায় অনুক্ষণ কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন।

এ ছাড়া ‘মাসিক সুরেশ্বর’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠা হযরত খাজা আহমদীনূরীর এক অসম সাহসিক কার্যের পরিচয় বহন করে, যা সর্বোচ্চ প্রশংসার দাবি রাখে।  সুরেশ্বর দরবার শরীফের কার্যক্রম প্রচার-প্রসারের লক্ষ্যে তিনি ১৯৭০ খৃষ্টাব্দে ৩৮৫/সি, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, ঢাকায় “খানকায়ে সুরেশ্বরী” স্থাপন করেন। তৎপর এখানে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করে অভিজ্ঞ অপারেটর, ভাষাবিদ, আলিম, জ্ঞানী-গুণীদের সমন্বয়ে প্রকাশনা কার্য সম্পাদন করে আসছেন। তিনি ‘হযরত সুরেশ্বরী রাঃ গবেষণা সেল’ গঠন করেছেন। তিনি দেশের স্বনামধন্য আলিম ও বহু ভাষাবিদ পন্ডিতগণের উপস্থিতিতে এই গবেষণা সেল সাফল্যের সাথে পরিচালনা করছেন। এ সেলের মাধ্যমে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ লিখিত কিতাব সমূহের গবেষণা-বিশ্লেষণ এবং তা বঙ্গানুবাদের মাধ্যমে সর্ব সাধারণের কাছে পৌঁছানোর কার্যক্রম দ্রুততার সাথে এগিয়ে চলছে।

হযরত খাজা আহমদীনূরী ১৯৭৯ সালে ‘রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ ফাউন্ডেশন’ প্রতিষ্ঠা পূর্বক রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর লিখিত কিতাবের গবেষণা ও বিশ্লেষণ, উচ্চারণ, বঙ্গানুবাদ শাব্দিক অর্থ সহ সর্ব সাধরণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী প্রকাশনার কাজ শুরু করেছেন। প্রতি বছর ২০শে অগ্রহায়ণ ঢাকার ‘খানকায়ে সুরেশ্বরী’তে রাসূলনোমা হযরত সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর পবিত্র ওফাত দিবস উপলক্ষে যথাযোগ্য মর্যাদায় ওরোছ শরীফ উদযাপন করেন। সে পবিত্রতম অনুষ্ঠানে হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী পীর রাঃ এর আওলাদগণ উপস্থিত থাকেন। বর্তমানে তিনি হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর নামে রাজধানী ঢাকা শহরে একটি পূর্ণাঙ্গ কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এই কমপ্লেক্স নির্মাণ করার জন্য সকল ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিগণের সহযোগিতা একান্ত প্রয়োজন।

হযরত খাজা আহমদীনূরী নিজ পিতামহ হযরত জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রাঃ এর মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে চান্দ্র মাসের সঠিক হিসাবের প্রতি যথাযথ গুরুত্ব প্রদানের মাধ্যমে চাঁদের উপর নির্ভরশীল ইবাদত-বন্দেগী যথা নির্দিষ্ট তারিখে পালন করেন। বিশ্বে যে দেশেই প্রথম চাঁদ দেখা যাবে, সে অনুযায়ী সকল মুসলমানের জন্যে ইবাদত-বন্দেগী পালন করা অবশ্য কর্তব্য। এ উদ্দেশ্য সাধনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা পালন করছেন। তিনি ‘আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ কমিটির উদ্যোগে তাঁর সভাপতিত্বে গত ২৪শে নভেম্বর, ২০০০ জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকায় এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারে দেশ-বিদেশের অসংখ্য আলিম-উলামা, জ্ঞানী-গুণী, বুদ্ধিজীবী সমবেত হন এবং কুরআন, হাদীস ও ফেকাহের মতাদর্শে একাত্ম হয়ে তাঁরা বিশ্বব্যাপী একই দিনে ঈদ, রোযা ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগী পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে প্রেস ক্লাবের বিভিন্ন লাউঞ্জে একই বিষয়ে দেশের প্রখ্যাত আলেম-উলামা ও বিশিষ্টজনদের নিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। চাঁদের হিসাবের ঐক্যনীতির প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয়ে কোন কার্পণ্য না করে নিরলস চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।

আধ্যাত্মিক সিদ্ধ পুরুষ হযরত খাজা আহমদীনূরী আল্লাহ পাকের রহমতে নিজ পীর-মোর্শেদ কেবলার অনুগ্রহে স্ব-মহিমায় উদ্ভাসিত। কর্মগুণে তিনি সকলের শ্রদ্ধাভাজন। যাহেরী ও বাতেনী উভয় শিক্ষায় তিনি নিজ মোর্শেদ কেবলার অনুগ্রহে মর্যাদাশীল। তাঁর সুখ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে দেশান্তরে। গত ৮ই জুন, ২০০১ ইরান সরকারের আমন্ত্রণে তিনি ইরান সফর করেন। সেখানকার ‘মাজবাউত তাকরিব বাইনাল মাযাহিবিল মুসলিমীন’ নামক সংস্থা ১০, ১১ ও ১২ জুন তিন দিন ব্যাপী আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছিল রাজধানী তেহরানে। সেই অনুষ্ঠানে হযরত খাজা আহমদীনূরী বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত সেমিনারে তিনি আহলে বাইত এবং মুসলিম ঐক্যের উপর গুরুত্বপূর্ণ ও নাতিদীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করেন। তাঁর বক্তব্য তেহরানের রেডিও ও টেলিভিশনে প্রচার করা হয় এবং ইরানের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা সমূহে বিশেষ গুরুত্বের সাথে প্রকাশিত হয়। তাছাড়া ইরান সরকারের আমন্ত্রনে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আন্তর্জাতিক সেমিনারে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে যোগদান করেন।

তিনি ইরানের মাশহাদ (খোরাসান), তুশ, কোম, শিরাজ প্রভৃতি ঐতিহাসিক শহর ভ্রমণ করেন এবং বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও আধ্যাত্মিক মনীষীবৃন্দের মাজার শরীফ জিয়ারত করেন। হযরত ইমাম আলী রেযা রাঃ, হযরত মাসুমা রাঃ, হযরত শায়খ সা’দী রাঃ, মহাকবি ফেরদৌসী রাঃ, কবি হাফিজ শিরাজী রাঃ, হযরত ইমাম খোমেনী রাঃ, হযরত ফরিদ উদ্দিন আত্তার রাঃ, হযরত ওমর খৈয়াম রাঃ, হযরত বাবা কুহী রাঃ ও সকল ইমামজাদাগণের মাজার (আরামগাহ্) যিয়ারত করেন। আশেকে রাসূল সাঃ হযরত খাজা আহমদীনূরী স্ব-স্ত্রীক পবিত্র উমরাহ ও নিজ মাতা সাহেবানী, স্ত্রী ও ভক্তবৃন্দকে নিয়ে পবিত্র হজ্জব্রত পালন করেন এবং মদিনা শরীফে রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাঃ এর পবিত্র রওজা মোবারক যিয়ারত করেন।

হযরত আহমদীনূরী আধ্যাত্মিকতা প্রচার প্রসারের উদ্দেশ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বে ও পরিচালনায় রয়েছেন। সেগুলো হচ্ছে-
    প্রেসিডেন্ট- বিশ্ব আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও গবেষণা ফাউন্ডেশন
    প্রেসিডেন্ট- হযরত রাসূলেনোমা ওয়াইসী পীর রাঃ ফাউন্ডেশন
    সভাপতি- সুরেশ্বর জামে মসজিদ
    প্রেসিডেন্ট- সুরেশ্বরী সমাজ কল্যাণ সংস্থা
    প্রেসিডেন্ট সুরেশ্বর দরবার শরীফ খলিফা পরিষদ
    প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক- ইসলামী দর্শনে অনন্য মাসিক সুরেশ্বর
    প্রেসিডেন্ট- আন্তর্জাতিক চাঁদ দেখা কমিটি
    স্বত্বাধিকারী- আহমদীনূরী কুতুবখানা
    মোন্তাজেম- সুরেশ্বর দরবার শরীফ মুসাফির খানা
    মোন্তাজেম- খানকায়ে সুরেশ্বরী
    চেয়ারম্যান- হযরত সুরেশ্বরী কমপ্লেক্স
    খাদেম ও তত্ত্বাবধায়ক- হযরত নূরশাহ রাঃ মাজার শরীফ
    প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি- সুরেশ্বরী শিল্পী গোষ্ঠী প্রভৃতি।

হযরত খাজা আহমদীনূরী ১৯৬৯ খৃষ্টাব্দের ২০ জুলাই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁর স্ত্রীর নাম বেগম নাছিমা আখতার। তাঁরা ৫ পুত্র ও ১ কন্যার জনক-জননী। তাঁরা সকলেই শিক্ষানুরাগী ও আশেকে রাসূল সাঃ এর অনুসারী।

হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ নিজ পিতা ও পিতামহের অনুসৃত মত-পথ যথাযথ অনুসরণের মাধ্যমে শরীয়ত, তরিকত, হাকীকত ও মারেফাতের বিধান মোতাবেক দরবার শরীফের পরিচালনা ও মানবকুলের হেদায়েত কার্যে সম্পূর্ণ রূপে নিমগ্ন রয়েছেন। হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ এর পুণ্যময় ও কর্মময় জীবন আরো সাফল্য মন্ডিত হোক এবং তিনি দীর্ঘ জীবন লাভ করুন এটাই আমাদের কামনা।