চাঁদের সঠিক হিসাব

moonমুসলিম জীবনে চাঁদের হিসাব অতি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চাঁদের হিসাব সম্পর্কে এ দেশের মানুষের যথার্থ ধারণা না থাকায় তারা হিসাবের গরমিলের কারণে নির্দিষ্ট সময়ের কাক্সিক্ষত রহমত-ফজিলত হতে বঞ্চিত হচ্ছে, কেননা শবে কদর, শবে বরাত, শবে মিরাজ ইত্যাদি এক রাতেরই ব্যাপার। হিসাব গণনা সঠিক না হলে তা পাওয়া যাবে না। একই ভাবে হিসাবের ক্রটির কারণে রমজানের ফরজ রোজা বিলম্বে শুরু এবং ঈদের দিনে রোজা রাখার মাধ্যমে হারাম রোজাও পালিত হয় এবং শবে কদর ও নির্ধারিত রাতে পালিত হয় না। যার ফলে মানুষ মহিমান্বিত রাতের ফজিলত লাভ থেকে বঞ্চিত হয়।

পবিত্র কুরআনে চাঁদ সম্পর্কে অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। সময় গণনা ও মানুষের হিসাবের সুবিধার জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন চাঁদের গুরুত্ব বর্ণনা করেছেন। যেমন সূরা বাকারায় আল্লাহর ঘোষণা,

আপনার নিকট তারা নতুন চাঁদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, বলুন, এটি মানুষের জন্য সময় নির্ধারণ ও হজ্জ্বের সময় ঠিক করার মাধ্যম। (আয়াত-১৮৯)

সূরা ইউনুছের ৫ নম্বর আয়াতে তিনি বলেছেন, তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জ্বল আলোকময়, আর চন্দ্রকে স্নিগ্ধ আলো বিতরণকারীরূপে এবং অতঃপর নির্ধারিত করেছেন এর জন্য মনজিল সমূহ, যাতে করে তোমরা চিনতে পার বছরগুলোর সংখ্যা ও হিসাব। আল্লাহ এই সমস্ত কিছু এমনিতেই সৃষ্টি করেননি, কিন্তু যথার্থতার সাথে। তিনি প্রকাশ করেন লক্ষণসমূহ সে সমস্ত লোকের জন্য যাদের জ্ঞান আছে।

সূরা লোকমানে তিনি আরো বলেছেন, তুমি কি দেখ না যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন? তিনি চন্দ্র ও সূর্যকে কাজে নিয়োজিত করেছেন। প্রত্যেকেই নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পরিভ্রমণ করে। তুমি কি আরও দেখ না যে, তোমরা যা কর, আল্লাহ তার খবর রাখেন? (আয়াত-২৯)

সূরা যুমার এ উল্লেখ করেছেন, তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত। জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল। (আয়াত-৫)

সূরা আর রহমান এ উল্লেখ করেছেন, সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমত চলে। (আয়াত-৫)

এভাবে আল-কুরআনের সূরা আল আনআম এর ৯৬ নং আয়াত, সূরা রাদ এর ২ নং আয়াত, সূরা ইব্রাহিম এর ৩৩ নং আয়াত, সূরা নাহল এর ১২ নং আয়াত, সূরা আম্বিয়া এর ৩৩ নং আয়াত, সূরা আল ফুরকান এর ৬১ নং আয়াত, সূরা আনকাবুত এর ৬১ নং আয়াত, সূরা লোকমান এর ২৯ নং আয়াত, সূরা ফাতির এর ১৩ নং আয়াত, সূরা ইয়াসীন এর ৩৯-৪০ নং আয়াত এবং আরো অনেক আয়াতে চাঁদের বিষয়ে বলা হলেও কুরআনুল কারীমে ভৌগোলিক রাজনৈতিক রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে দেখতে হবে এরকম কোন শর্ত দেয়া হয়নি বরং হিসাবের জন্য হুকুম এসেছে যা ফরজ।

রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ সাঃও নতুন চাঁদের হিসাবের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি নিজে যেমন নতুন চাঁদ দেখার জন্য সচেষ্ট থাকতেন, তেমনিভাবে উম্মতগণের প্রতিও নির্দেশনা দান করেছেন। নতুন চাঁদ দেখার প্রয়োজনীয়তা, চাঁদের হিসাব রাখা ও সাক্ষ্য গ্রহণের বিষয়ে হাদিস সমূহে বিশেষ ভাবে গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ভূ-সীমার ভিত্তিতে চাঁদের হিসাব রাখার বিষয়ে হাদিসে কোন নির্দেশনা নেই। চাঁদ দেখার বিষয়ে যে সকল হাদিস রয়েছে সেগুলোর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নিম্নরূপ।

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত, “হযরত রাসূল সাঃ শাবান মাসের তারিখ সমূহ উত্তমরূপে স্মরণ রাখতেন, অন্য কোন মাসের হিসাব এত গুরুত্বের সাথে রাখতেন না, এরপর রমজান মাসের চাঁদ দেখে রোজা রাখতেন।” (আবু দাউদ)

অন্যত্র রাসূল সাঃ বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখ, আর চাঁদ দেখে রোজা সম্পন্ন কর। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তা হলে শাবান মাসের দিনের সংখ্যা ত্রিশ পূর্ণ কর।” (বুখারী ও মুসলিম শরীফ)

রাসূলুল্লাহ সাঃ আরো বলেছেন, “তোমাদের যে কোন একজন চাঁদ দেখলে তা সকলের দেখা বলে গণ্য হবে এবং সে অনুযায়ী হিসাব শুরু করতে হবে।”

রাসূলুল্লাহ সাঃ বিশ্বের সকল মানুষের জন্য শেষ নবী হিসাবে এই পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। তিনি কোন জাতি-গোষ্ঠীর নবী নন, বরং তিনি সার্বজনীন এবং সমগ্র বিশ্বের জন্য রহমত স্বরূপ প্রেরিত হয়েছিলেন। তাই উপরোক্ত হাদিস সমূহে রাসূলুল্লাহ সাঃ ‘তোমরা’ ও ‘তোমাদের’ সর্বনাম দ্বারা শুধুমাত্র আরববাসীদের বুঝাননি বরং তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীকে বুঝিয়েছেন। তাই তাঁর এই সকল উক্তি সমগ্র বিশ্বের সকল মানুষের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য।

আল-কুরআনের নির্দেশনার আলোকে রাসূলুল্লাহ সাঃ তাঁর উম্মি উম্মতদের হিসাবের সুবিধার্থে আকাশের চাঁদ দেখার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে নতুন চাঁদ উদয়ের সময়-ক্ষণ মানুষ অনেক আগেই জানতে পারছে। মাসের প্রথম চাঁদ কবে কখন কোথায় দেখা যাবে, কোন দিন পূর্ণিমা, কোন দিন অমাবশ্যা তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণ অনেক পূর্বেই বলে দিতে পারেন। বিজ্ঞানীরা যেভাবে চিরস্থায়ী নামাজের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন তেমনিভাবে স্থায়ী চাঁদের ক্যালেন্ডারও তৈরি করেছেন। হাদিস শরীফের বর্ণনানুসারে কিছু কাল পূর্বেও আকাশে সূর্যের অবস্থান দেখে নামাজের সময় নির্ধারণ করা হত বর্তমানে তার প্রয়োজন হয় না। দেশের প্রায় শত ভাগ মসজিদে চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে নামাজের সময়সূচী নির্ধারণ করা হচ্ছে। অনুরূপভাবে বর্তমান জ্ঞান-বিজ্ঞানের যুগে আল কুরআনের নির্দেশ অনুসারে হিসাবের ভিতিত্তে চাঁদের স্থায়ী ক্যালেন্ডারকে ভিত্তি করে বিশ্বের সকল দেশের মুসলমানগণ একই দিনে ঈদ, রোজা, শবে বরাত, শবে কদর, শবে মিরাজ, ঈদে মিলাদুন্নবীসহ চাঁদের হিসাবের সাথে সম্পর্কীত সকল অনুষ্ঠান পালন করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা চাঁদের গতিবিধির উপর ভিত্তি করে চাঁদের স্থায়ী ক্যালেন্ডার তৈরি করেছেন। তা দেখে পূর্বেই নতুন চাঁদের উদয়স্থল ও সময় সম্পর্কে জানা যাবে। অতঃপর সে অনুসারে চাঁদ দেখে ইবাদত-বন্দেগী করা সম্ভব। সকলে যদি এই সকল তারিখে চাঁদের উদয়স্থলের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করে তাহলে সঠিক সময়ে সঠিক ইবাদত করা সম্ভব হবে এবং প্রখম দিকে দু,একটি রোজা বাদ যাবে না বা ঈদের দিনে হারাম রোজা করার সম্ভাবনাও থাকবে না।

ইসলামী ফেকাহের চার মাজহাবের চার ইমামের মধ্যে কেবল হযরত ইমাম শাফেয়ী রহঃ ব্যতীত অবশিষ্ট তিন ইমাম এবং বিশ্বের বিখ্যাত ইসলামী আইন বিশারদ ও ফেকাহের গ্রন্থকারগণ নতুন চাঁদ দেখার বিষয়ে অনুরূপ মত প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে পৃথিবীর যে কোন স্থানে চাঁদ দেখা গেলে কিংবা বিশ্বস্ত সূত্রে সংবাদ পৌঁছলে চাঁদ কেন্দ্রীক ইবাদত পালন করতে হবে। বাংলাদেশের প্রায় ৯০ ভাগ মুসলমান হানাফি মাজহাবের অনুসারী হলেও চাঁদের হিসাবের ক্ষেত্রে তারা ইমাম হযরত আবু হানিফা রাঃ এর নির্দেশনা অনুসরণ করছে না।

ইমাম আবু হানিফা রহঃ এর বরাতে দোররুল মুখতার কিতাবে লিখিত আছে, “যদি প্রাচ্যে পাশ্চাত্যের চাঁদ দেখার সংবাদ নির্ভরযোগ্যভাবে পৌঁছে থাকে তবে প্রাচ্যবাসীর উপর রোজা রাখা ওয়াজিব হবে। (দোররুল মুখতার, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ-৯৬) হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহঃ রচিত ‘বেহেশতি জেওর’ (উর্দু ১১তম খণ্ড, পৃঃ-৯৫৩), হযরত মাওলানা সৈয়দ হোসাইন আহমদ মাদানী রহঃ রচিত ‘মাআরিফে মাদানিয়া’ (দশম খণ্ড, পৃঃ-১৯), মুফতি আজিজুর রহমান দেওবন্দী রহঃ এর ‘ফতোয়ায়ে দারুল উলুম দেওবন্দ’ (৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ-৩৬৪), হযরত মাওলানা রশীদ আহমদ গাংগুহী রহঃ এর ‘ফতোয়ায়ে রশীদিয়া’ (প্রশ্ন নং- ২২), ‘ফতোয়ায়ে শামী’ (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃঃ- ৩৯৯), ফতোয়ায়ে আলমগীরি (প্রথম খণ্ড, পৃঃ-১৯৮-১৯৯), ‘ফতোয়া আল হিন্দিয়া’ প্রভৃতি ফতোয়ার কিতাবে সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে যে, এক শহরের লোকদের চাঁদ দেখা হলে তার হুকুম অন্য শহরের লোকদের বেলায়ও প্রযোজ্য হবে ; এ দু’টো শহরের মধ্যে দূরত্ব যতো বেশিই হোক না কেন, এমনকি পাশ্চাত্যের প্রান্তে যদি চাঁদ দেখা যায় এবং সেই খবর প্রাচ্যের শেষ প্রান্তেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে পৌঁছে; তাহলে তাদের উপর রোজা রাখা কর্তব্য হবে। এমনকি একদিন পর চাঁদ দেখার কারণে যদি কোন দেশের লোকজন ২৯টি রোজা রাখে, ইতিমধ্যে তারা পূর্বোক্তদের রোজা শুরুর তারিখ জানতে পারে- এতে তাদের উপর একটি রোজা কাযা করা ওয়াজিব।

প্রধান প্রধান মাজহাবের ইমামগণ এবং ফেকাহবিদগণ যেভাবে চাঁদের হিসাবের নির্দেশনা দান করেছেন তাতে রাজনৈতিক ভৌগোলিক সীমারেখার কোন গুরুত্ব স্থান পায়নি। বরং শরীয়ত সম্মত ভাবে চাঁদ দেখার সংবাদ পৌঁছার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। বর্তমানে ফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট বা স্যাটেলাইটের সংবাদ সর্বত্র গ্রহণযোগ্য। চাঁদের স্থায়ী ক্যালেন্ডারে যখন যে স্থানে নতুন চাঁদ উদয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে সে স্থানে চাঁদ উদয়ের সংবাদ গ্রহনযোগ্য মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যে কোন স্থানে পৌঁছানো সম্ভব এবং সে মতে আমল করার মধ্যে শরীয়তের কোন খেলাপ হবে না।

মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের সংগঠন ওআইসি’র অঙ্গ সংস্থা ‘ইসলামী ফিকাহ একাডেমী’ ইসলামের বিধি-বিধান যথার্থরূপে পালনের লক্ষ্যে ১৯৮৬ সালের ১১-১৬ অক্টোবর মোতাবেক ৮-১৩ সফর ১৪০৭ হিজরী আম্মানে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে ৬ নং     প্রস্তাবে ঘোষণা করে, “কোন দেশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে অন্য দেশের মুসলমানদেরও তাই মেনে চলা দরকার। চন্দ্র উদয়ের স্থানের পার্থক্য বিবেচনার প্রয়োজন নেই। কেননা চাঁদ দেখা মাত্র রোজা রাখার (অর্থাৎ রমজান শুরু করার) ও শাওয়ালের চাঁদ দেখে ঈদ করার আদেশ সার্বজনীন ও সবার জন্যে প্রযোজ্য।”

ওআইসি’র ফিকাহ একাডেমির সিদ্ধান্ত অনুসারে বিশ্বের ৫৪টি মুসলিম দেশের মধ্যে ৪৭টি দেশে একই দিনে রোজা, ঈদ ও অন্যান্য ইসলামী পর্ব সমূহ পালন করছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়া। আর জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রসর দেশ সমূহের অন্যতম মালয়েশিয়া। এই দেশ দুইটির অবস্থান প্রাচ্যে তথা বিশ্ব মানচিত্রের পূর্ব দিকে। বাংলাদেশের সাথে সৌদি আরবের সময় পার্থক্য তিন ঘণ্টার। কিন্তু ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ার সাথে সৌদি আরবের সময় পার্থক্য ৫-৬ ঘণ্টা। তা সত্ত্বেও সে সব দেশ ওআইসি’র ফেকাহ একাডেমির সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বে প্রথম চন্দ্র দর্শনের উপর ভিত্তি করে চাঁদের উপর নির্ভরশীল ইসলামী পর্ব সমূহ উদযাপন করে আসছে। একই সাথে তাদের পার্শ্ববর্তী ব্র“নাই, কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুরেও একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান সমূহ পালন করা হয়।

আজ হতে প্রায় এক শত চল্লিশ বছর পূর্বে শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রহঃ সঠিকভাবে চান্দ্র মাসের গণনার ভিত্তিতে ইবাদত-বন্দেগী ও ইসলামী পর্ব সমূহ পালন করার জন্যে নির্দেশনা দান করেন। তিনি বলেছেন, যখন বাংলাদেশের আকাশে নতুন চাঁদ উদয়ের ক্ষণ থাকে, তখন সূর্যের অবস্থান থাকায় এ দেশের মানুষ তা দেখতে পারে না। কিন্তু আরব বিশ্বে যে সময়ে নতুন চাঁদ উদয়ের ক্ষণ আসে তখন সেখানে সন্ধ্যা হওয়ায় তারা তা দেখতে পায়। আর সে কারণেই বাংলাদেশের আকাশে প্রথম যে চাঁদ দেখা যেত হযরত সুরেশ্বরী রাঃ তা দেখে বলে দিতেন এ চাঁদের বয়স ২ দিন বা ৩ দিন। আর সেই আলোকেই তিনি ইবাদত-বন্দেগী পালন করতেন। এই প্রসঙ্গে তিনি স্বরচিত ‘নূরেহক্ক গঞ্জেনূর’ কিতাবে ‘চান্দ দেখিবার নিয়ম’ নামে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।

আমাদের দেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় সরকারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সমূহ স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার নীতি অনুসরণ করে। কিন্তু এদেশের বিভিন্ন আধ্যাত্মিক দরবার এবং কিছু প্রগতিশীল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থানীয়ভাবে চাঁদ দেখার পরিবর্তে বিশ্বে প্রথম চাঁদ দেখে হিজরী সন গণনার পক্ষপাতি। তাই তারা সরকারের ঘোষণার সাথে একাত্ম না হয়ে চাঁদের স্থায়ী ক্যালেন্ডার অনুসারে বহিঃবিশ্ব থেকে চাঁদ দেখার সংবাদ সংগ্রহের মাধ্যমে ইসলামী পর্বসমূহ উদযাপন করে থাকে। তারা যথার্থই উপলব্ধি করেছেন যে, সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মাঝে মাত্র তিন ঘণ্টা ব্যবধানের কারণে এক দিন বা দুই দিন পরে রোজা রাখা ও ঈদ করা এবং টেলিভিশনে প্রচারিত হজ্জ্বের দৃশ্য স্বচোক্ষে দেখা সত্ত্বেও পরবর্তী দিনে কুরবানী ঈদ পালন না করা বাঞ্ছনীয় নয়। তাই সরকার ও দেশের সূধী মহলের প্রতি আবেদন তারা যেন নতুন চাঁদের হিসাবের ক্ষেত্রে কুরআন কারীমের হিসাবের নির্দেশনা অনুযায়ী চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে দেশের মানুষকে সঠিক সময়ে সঠিক ইবাদত করার সুযোগ করে দেন।