তরিকত বিস্তারে অবদান

 

দেশ-বিদেশে তরিকত বিস্তার

ভিতরে বাহিরে বিরোধিতা

বিভিন্ন জেলায় তরিকত প্রচার

দেশ-বিদেশে তরিকত বিস্তার

হযরত খাজা আহমদীনূরী যে সময়ে ধর্মীয় প্রচার প্রচারণা শুরু করেন সে সময়ে দেশের ধর্মীয় পরিবেশ মোটেও কলুষমুক্ত ছিল না। ধর্মীয় নানা গোষ্ঠী নিজেদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য একে অন্যের উপর নানাভাবে বিদ্বেষ-বিষদগার করত এবং হামলা নির্যাতন বা গোপন চক্রান্তে লিপ্ত হত। এতে করে দেখা যেত ধর্মপ্রাণ নিরীহ মানুষ সত্য সঠিক পথের দিশা লাভ থেকে বঞ্চিত হত। বৈদেশিক বিভিন্ন শক্তি অর্থানুকুল্যে দেশীয় লেবাসধারী আলেম উলামা নানা ফতোয়া দিয়ে মানুষের ধর্মীয় অধিকার নিজেদের কুক্ষিগত করার চেষ্টায় লিপ্ত। বিভিন্ন চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকায় ইসলামী অনুষ্ঠানের নামে ধর্মীয় নানা মিথ্যাচার মানুষের অন্তরে গ্রথিত করার চেষ্টায় তারা সর্বোতভাবে চেষ্টা করছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওয়াজ-নছিহতের মাধ্যমেও ধর্মীভীরু মানুষের অন্তরে ইসলামের মূল মন্ত্র বিরোধী নানা ফতোয়া জুড়ে দেয়া হচ্ছে। ধর্মীয় রাজনীতির নামে হিংসা হানাহানি এবং বোমাবাজি করে ধর্মীয় পরিবেশ এবং ইসলামী ব্যক্তিত্বগণকে নানা প্রশ্নের সম্মুখীন করা হয়েছে। এমনই এক কলুষিতময় পরিবেশে হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃজিঃআঃ ধর্মীয় সুন্দর রীতি-সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়েছেন। কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ্ব হলো ইসলামের মূল স্তম্ভ। আর ইসলামের প্রাণ হলো আল্লাহর অলিগণ। যারা মানুষের অন্তরে ইসলামের আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন। দিগ-দিগন্তে অন্ধকারের অমানিশা দূর করে আলোকোজ্জ্বল ইসলামের বাতি প্রজ্জ্বলিত করেছেন। হযরত আহমদীনূরী বিভিন্ন বক্তৃতা, লেখনী ও প্রকাশনার মাধ্যমে মূল ইসলামের শিক্ষা মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। একই সঙ্গে ভ্রান্তবাদীদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে সত্য-সঠিক পথে চলার দিক-নির্দেশনা দান করেছেন। তাই বলা যায় এমনই এক কলুষিতময় এবং বিপদজনক পরিবেশে হযরত খাজা আহমদীনূরী ইসলামের বাণী মানুষের সামনে তুলে ধরেছেন যা তার অসীম সাহসিকতার পরিচয় বহন করে এবং তিনি যে, সত্যিকার অর্থে ইসলাম প্রিয় এবং মানুষকে হেদায়েতের পথে একনিষ্ঠ আহ্বাণকারী তা তাঁর কথা ও কাজের মধ্যেই সুপ্রমাণিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর এই সকল কাজ কেয়ামত পর্যন্ত জারি রাখুন এবং সকলকে তাঁর অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন।

ভিতরে বাহিরে বিরোধিতা

হযরত খাজা আহমদীনূরী তরিকত প্রচারের ক্ষেত্রে নানাভাবে প্রতি পদে পদে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। একদিকে তিনি সমাজের নানা শ্রেণী-গোষ্ঠীর বাধা পেয়েছেন অন্যদিকে আপনজনদের নিকট থেকেও নানা অসহযোগিতা পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও তিনি একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা করে হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ এর নামে দরবার শরীফের প্রচার-প্রচারণার কার্যক্রম চালিয়ে যান। সমাজের একশ্রেণীর নামধারী আলেম-উলামা সব সময় রাসূল সাঃ, তাঁর আহলে বাইত এবং অলি-আল্লাহগণের প্রেম বিদ্বেষী প্রচার প্রচারণায় লিপ্ত। তারা সব সময় বলে থাকেন আল্লাহকে পাওয়ার জন্য উসিলার প্রয়োজন কিসে? অলি-আউলিয়াগণের প্রয়োজনীয়তাও তারা উপেক্ষা করেন। তারা বিভিন্নভাবে হযরত খাজা আহমদীনূরীর কার্যক্রমে বাধাদান করেছেন। কিন্তু তিনি তাদের বিরোধীতার তোয়াক্কা করেননি। জীবনের ভয় তিনি করেননি। তাঁকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হলেও তিনি তা গ্রাহ্য করেননি। তিনি বলেন, জীবনদাতা এবং হরণকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ। সুতরাং তাদের ভয় করে কি হবে। আমাদের কাজ আমাদেরকে করতে হবে। রাসূল সাঃ এর জীবনে অনেক বিরোধীতা হয়েছে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সুতরাং আল্লাহর নাম নিয়ে সব কিছু জয় করতে হবে। হযরত খাজা আহমদীনূরী শিক্ষা-দীক্ষা, বুদ্ধি-জ্ঞানে অগ্রগামী থাকায় তাঁর সাথে কেউ জ্ঞান-গরিমায় জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু হযরত খাজা আহমদীনূরীর মোর্শেদ প্রেম, হযরত সুরেশ্বরী রাঃ এর প্রতি ভালবাসা এবং রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী কেবলার প্রতি অগাধ ভক্তি শ্রদ্ধাও অন্য সকলের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়াল। তিনি সব দিক থেকে এগিয়ে যাক এটা অনেকে ভাল চোখে দেখত না। তাই দেখা গেল এক শ্রেণীর লোক তাঁকে নানাভাবে পরাস্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল ।

বিভিন্ন জেলায় তরিকত প্রচার

হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃজিঃআঃ জীবনের প্রারম্ভ থেকেই আল্লাহর বাণী প্রচারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। এই লক্ষ্যে চরমতম সাফল্য লাভ করার অভিপ্রায়ে তিনি নিজেকে সব দিক থেকে গড়ে তোলার জন্য সচেষ্ট হন। তাই দেখা গেল তরিকত প্রচার এবং নিজেকে যোগ্যরূপে গড়ে তোলার কাজ যুগপৎ চলতে থাকে। পিতা কেবলার জীবদ্দশায় তিনি তাঁর সাথে দেশের বিভিন্ন জেলায় তরিকত প্রচারের কাজ করেছেন। তার মধ্যে ভোলা, নোয়াখালী, মাদারীপুর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। মাত্র এগার বছর বয়সে পিতা কেবলার ইন্তেকালের পর তিনি যারপর নাই শোকাভিভূত হলেন এবং যথার্থ অভিভাবকের অভাব বোধ করতে থাকেন। তখন হযরত নূরশাহ কেবলার প্রধান প্রধান মুরিদ-খলিফাগণ তাঁদের পীর-মোর্শেদ কেবলার অসিয়ত মত তাঁর প্রতি খেয়াল রাখার চেষ্টা করতেন। সে সময় থেকেই হযরত খাজা আহমদীনূরী দেশের বিভিন্ন জেলায় তরিকত বিস্তারের কার্যক্রম শুরু করেন।  তরিকত বিস্তারের প্রয়োজনে হযরত খাজা আহমদীনূরী যখন যেখানে প্রয়োজন সেখানে গমন করেছেন। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলাতেই তাঁর অসংখ্য ভক্ত মুরিদান রয়েছে এবং তিনিও তরিকত বিস্তারের কাজে দেশের প্রায় সকল জেলাতেই গমন করেছেন। তবে দেশের কিছু কিছু জেলায় তাঁর ভক্ত-মুরিদানের আধিক্য দেখা যায় এবং তিনিও সে সকল জেলাতে বেশি পরিমাণে গমন করেছেন। এ সকল জেলার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- নোয়াখালী, মাদারীপুর, ভোলা, বরিশাল, ময়মনসিংহ, শেরপুর ইত্যাদি। হযরত খাজা আহমদীনূরী তরিকত বিস্তারের যে মহান ব্রতে জীবনের প্রারম্ভ থেকে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তাতে তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন এটা বলতে পারি নিদ্বির্ধায়। দেশের প্রতিটি প্রান্তরেই তিনি তরিকতের দাওয়াত পৌঁছিয়েছেন এবং অসংখ্য পথহারা মানুষকে আল্লাহর পথ দেখিয়েছেন।  হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ ও হযরত নূরশাহ রাঃ এর যথার্থ অনুসরণ ও তাঁদের মতাদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল ভ্রমণের মাধ্যমে পথহারা মানুষকে সত্যের পথে আহবান জানিয়েছেন। তাঁর প্রবল রুহানি শক্তির আকর্ষণে মানুষ অভিভূত ও অনুপ্রাণিত হয়ে দলে দলে সত্যের আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। নারী-পুরুষ যুবক-বৃদ্ধ নির্বিশেষে সকলে তাঁর পবিত্র হস্তে বায়াত গ্রহণের মাধ্যমে সত্যের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন।  হযরত খাজা আহমদীনূরী জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই কাটিয়েছেন মানব কল্যাণে। ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আহবান করেছেন পথহারা মানুষকে। তাঁর আভিজাত্যময় সোহবত লাভ করে মুহূর্তের মধ্যে অশান্ত হৃদয় লাভ করেছে অনাবিল শান্তি, পথহারা পেয়েছে সঠিক পথের দিশা, অন্ধকার হৃদয় হয়েছে আলো ঝলমল রৌশনায় উজ্জ্বল আয়নার মত। যিনি এসেছেন তিনিই উপলব্ধি করেছেন, তিনি হয়েছেন কামিয়াবি। হযরত নূরশাহ রাঃ এর কনিষ্ঠ পুত্র ও তাঁর আশীর্বাদপুষ্ট খলিফা হিসেবে হযরত খাজা আহমদীনূরী প্রবল প্রতাপে দেশের সর্বত্র ইসলামের প্রচার-প্রসার করেছেন। তরিকতের পথে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। শরিয়তের সাথে আধ্যাত্মিক শিক্ষায় ভক্ত-মুরিদানকে আল্লাহর সান্নিধ্য দানে মহাসাফল্যে ধন্য করেছেন। শুধু মানবকুল নয় অসংখ্য জীন মুরিদও তাঁর পরশে ধন্য হয়েছেন।
বিদেশে তরিকত প্রচার
হযরত খাজা আহমদীনূরী এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক দেশ সফর করেন। সে সমস্ত দেশে তিনি জনগণের মাঝে সত্যের দাওয়াত প্রচার করেছেন। তাঁর দাওয়াতে সাড়া দিয়ে সেখানকার বহু মানুষ তরিকত গ্রহণ পূর্বক আধ্যাত্মিক জীবন পরিগ্রহ করেন। হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃজিঃআঃ তরিকত প্রচারের কার্যক্রম শুধু দেশের সীমানার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি তরিকত প্রচারের উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমন করেছেন এবং সে সকল দেশে অনেক মানুষকে হেদায়েতের পথে অধিষ্ঠিত করেছেন। এ লক্ষ্যে তিনি কোন কোন দেশে একাধিকবার গমন করেছেন। হযরত খাজা আহমদীনূরী তরিকত প্রচারের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালী, সৌদিআরব, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ইত্যাদি দেশে একাধিকবার গমন করেছেন। তাছাড়া তিনি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত ইত্যাদি দেশেও তরিকত প্রচারের কাজ করেছেন। এ সকল দেশে তাঁর অসংখ্য বাঙ্গালী ভক্ত-মুরিদান রয়েছে। তাছাড়া বহু অবাঙ্গালী বিদেশী মুরিদানও রয়েছে। তাদের অনেকেই তাঁর সাক্ষাত লাভের আশায় বাংলাদেশেও আগমন করেছেন।