নূরের নবী মুহাম্মদ সা.
জাহেলিয়াতের কালো মেঘ সমগ্র বিশ্বে ছায়া মেলে রেখেছিল। অসৎ ও ঘৃণ্য কার্যকলাপ,রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ-বিগ্রহ,লুটতরাজ ও সন্তান হত্যা সব ধরনের নৈতিক গুণের বিলুপ্তি ঘটিয়েছিল। এমন পরিস্থিতিতে সৌভাগ্যরবি উদিত হলো এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে আলোকোজ্জ্বল হয়ে গেল। নূরের নবীর আগমনের মাধ্যমে একটি অনগ্রসর জাতির সৌভাগ্যের ভিত্তিও স্থাপিত হলো। অনতিবিলম্বে এ নূরের বিচ্ছুরণে সমগ্র জগৎ আলোকোদ্ভাসিত হলো এবং সমগ্র বিশ্বে এক সুমহান মানব সভ্যতার ভিত্তিও নির্মিত হয়ে গেল।
।
শৈশব
প্রত্যেক মহামানব ও মনীষীর জীবনের প্রতিটি অধ্যায়, জীবনের প্রতিটি ছত্র যেদিন তাঁদের ভ্রুণ মাতৃজঠরে স্থাপিত হয় সেদিন থেকে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত রহস্যাবৃত। বিশ্বের মহামানবদের শৈশব ও বাল্যকাল অধ্যয়ন করলে দেখা যায় যে, তা আশ্চর্যজনক ও অলৌকিক বিষয়াদি দিয়ে ভরপুর।
পবিত্র কোরআন হযরত মূসা (আ.)-এর শৈশব ও বাল্যকাল অত্যন্ত রহস্যময় বলে ব্যাখ্যা করেছে এবং এ প্রসঙ্গে বলেছে : মূসা (আ.) যাতে জন্মগ্রহণ করতে না পারে সেজন্য ফিরআউন সরকারের নির্দেশে শত শত নিষ্পাপ শিশুর শিরোচ্ছেদ করা হয়েছিল। মূসা (আ.)-এর জন্মগ্রহণ ও এ পৃথিবীতে আগমনের সাথেই মহান আল্লাহর ঐশী ইচ্ছা জড়িত হয়েছিল বিধায় শত্রুরা তাঁর ক্ষতিসাধন তো করতে পারেই নি,বরং তাঁর সবচেয়ে বড় শত্রুও (ফিরআউন) তাঁর প্রতিপালনকারী ও পৃষ্ঠপোষকে পরিণত হয়েছিল। পবিত্র কোরআন এরশাদ করেছে : “আমরা মূসার মাকে ওহী করেছিলাম যে,সন্তানকে একটি বাক্সে রেখে সমুদ্রে ফেলে দাও,তাহলে সমুদ্রের তরঙ্গ ওকে মুক্তির সৈকতে পৌঁছে দেবে। আমার ও তার শত্রু তার প্রতিপালন করবে; আমি শত্রুর বুকে তার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের উদ্ভব ঘটাব। আর এভাবে আমি পুনরায় তোমার সন্তানকে তোমার কাছেই ফিরিয়ে দেব।”
মূসার বোন ফিরআউনের দেশে গিয়ে বলল,”আমি এক মহিলার সন্ধান দেব যে আপনাদের প্রিয় এ শিশুটির লালন-পালনের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই ফিরআউন-সরকারের পক্ষ থেকে মূসার মা তাদের (ফিরআউনের) প্রিয় শিশুর (মূসার) লালন-পালনের দায়িত্বভারপ্রাপ্ত হলেন।”
হযরত ঈসা (আ.)-এর মাতৃগর্ভে বিকাশ,জন্মগ্রহণ এবং লালন-পালনকাল হযরত মূসা (আ.)-এর চেয়েও অধিকতর আশ্চর্যজনক। পবিত্র কোরআন হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম ও শৈশব কাল বর্ণনা করে বলেছে,”ঈসার মা মরিয়ম নিজ সম্প্রদায় থেকে পৃথক হয়ে গেলেন। পবিত্র আত্মা (জিবরাইল) মানুষের আকৃতি ধারণ করে তাঁর সম্মুখে প্রকাশিত হলেন এবং তাঁকে সুসংবাদ দিলেন যে,আপনাকে একটি পবিত্র সন্তান দানের জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়েছে।” মরিয়ম তখন আশ্চর্যান্বিত হয়ে বললেন, “কেউ আমাকে স্পর্শ করে নি এবং আমিও তো ব্যভিচারিণী নই।” আমাদের দূত তখন বললেন, “এ কাজ মহান আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সহজ।” সন্তান জন্মগ্রহণ করলে মরিয়ম নবজাতক সন্তানসহ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে ফিরে আসলেন। আশ্চর্যান্বিত হয়ে জনগণের মুখের ভাষা যেন থেমে গিয়েছিল। এরপর মরিয়মের উদ্দেশ্যে তীব্র প্রতিবাদ, আপত্তি ও অসন্তোষের ঝড় উঠেছিল। মরিয়মকে পূর্বেই মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে করে তিনি বুঝিয়ে দেন যে,তারা যেন এই শিশুকে তাদের সকল প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করে। তারা বলেছিল, “যে দুগ্ধপোষ্য শিশু দোলনায় শায়িত সে কি কথা বলতে সক্ষম?” তখন হযরত ঈসা (আ.) ঠোঁট খুলে বলে উঠলেন,”আমি মহান আল্লাহর বান্দা (দাস)। তিনি আমাকে কিতাব (ঐশী গ্রন্থ) দিয়েছেন এবং আমাকে নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন।”
পবিত্র কোরআন,তাওরাত ও হযরত ঈসার অনুসারিগণ যখন এ দু’মহান উলূল আযম নবী সংক্রান্ত যাবতীয় উল্লিখিত বিষয়ের সত্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করে তখন ইসলামের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মোপলক্ষে যেসব আশ্চর্যজনক বিষয় ঘটেছিল সে সব ব্যাপারে বিস্মিত হওয়া এবং সেগুলোকে ভাসাভাসা ও অগভীর বলে বিবেচনা করা অনুচিত। আমরা হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহে দেখতে পাই :
মহানবীর জন্মগ্রহণের মুহূর্তে সম্রাট খসরুর প্রাসাদের দ্বারমণ্ডপ ফেটে গিয়েছিল এবং এর কয়েকটি স্তম্ভ ধসে পড়েছিল। ফারস প্রদেশের অগ্নি উপাসনালয়ের প্রজ্বলিত অগ্নি নিভে গিয়েছিল। ইরানের সাভেহর হরদ শুকিয়ে গিয়েছিল। পবিত্র মক্কার প্রতিমালয়সমূহে রক্ষিত মূর্তি ও প্রতিমাসমূহ মাটিতে পড়ে গিয়েছিল। তাঁর দেহ থেকে নূর (আলো) বের হয়ে তা আকাশের দিকে উত্থিত হয়েছিল যার রশ্মি ফারসাখের পর ফারসাখ (মাইলের পর মাইল) পথ আলোকিত করেছিল। সম্রাট আনুশিরওয়ান ও পুরোহিতগণ অতি ভয়ঙ্কর স্বপ্ন দর্শন করেছিলেন।
মহানবী (সা.) খতনাকৃত ও নাভি কর্তিত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তিনি বলেছিলেন :
الله أكبر و الحمد لله كثيرا سبحان الله بكرة و أصيلا
“আল্লাহ্ মহান,সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর,সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করছি।”
এ সব বিষয় ও তথ্য সকল মৌলিক নির্ভরযোগ্য হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত মূসা ও হযরত ঈসার ব্যাপারে যে সব বিষয় পরিলক্ষিত হয়, সেগুলো বিবেচনায় আনলে এ ধরনের ঘটনাসমূহ মেনে নেয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ করার কোন অবকাশ থাকে না।
মহানবী (সা.) যে রাতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে রাতে ঘটে যাওয়া সব ঘটনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল ঐ সব মানুষের অন্তরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দেয়া ও মনোযোগ সৃষ্টি করা যারা মূর্তিপূজা, অন্যায় ও জুলুমের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছিল।
এ ধরনের ঘটনাবলী হযরত ইবরাহীম, হযরত মূসা, হযরত ঈসা ও হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর মতো মহান নবীদের জন্মগ্রহণের সময় সংঘটিত হওয়া তাঁদের নবুওয়াত ও রিসালাতের যুগে ঐ সব অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়; আর এ সব কিছু আসলে মহান আল্লাহর ঐশী কৃপা থেকেই উৎপত্তি লাভ করেছে এবং মানব জাতির হেদায়েত ও তাদেরকে মহান নবীদের দীন প্রচার কার্যক্রমের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্যই সংঘটিত হয়েছে।
।
মহানবী সা. এর জন্ম তারিখ
ঐতিহাসিকগণ ঐকমত্য পোষণ করেন যে, মহানবী হাতির বছর (عام الفيل) অর্থাৎ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কারণ তিনি ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তেকাল করেছিলেন। এ সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। অধিকাংশ ঐতিহাসিক ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,মহানবী (সা.) ১২ রবিউল আউয়াল, সোমবার জন্মগ্রহণ করেন।
।
মহানবী সা. এর নামকরণ
মহানবী (সা.)-এর জন্মগ্রহণের পর সপ্তম দিবস উপস্থিত হলো। আবদুল মুত্তালিব মহান আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার জন্য একটি দুম্বা যবেহ করলেন। মহানবীর নাম রাখার জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানে সকল কুরাইশ নিমন্ত্রণ পেয়েছিলেন। দাদা আবদুল মুত্তালিব তাঁর নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখলেন। যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করা হলো,”আপনি কেন আপনার নাতির নাম ‘মুহাম্মদ’ রাখলেন,অথচ আরবদের মধ্যে এ নামটি অত্যন্ত বিরল?” তখন তিনি বললেন,”আমি চেয়েছিলাম যে,সে আকাশ ও পৃথিবীতে প্রশংসিত হোক।” এ সম্পর্কে কবি হাসসান ইবনে সাবিত লিখেছেন :
فشق له من اسمه ليبجله فذو العرش محمود و هذا محمّد
“নবীর সম্মান ও মর্যাদার জন্য স্রষ্টা তাঁর নিজ নাম থেকে তাঁর (নবীর) নাম নিষ্পন্ন করেছেন; তাই আরশের অধিপতি (মহান আল্লাহ্) মাহমুদ (প্রশংসিত) এবং ইনি (তাঁর নবী) মুহাম্মদ (অর্থাৎ প্রশংসিত)।”
পবিত্র কোরআন মহানবী (সা.)-কে দু’বা ততোধিক নামে পরিচিত করিয়েছে। সূরা আলে ইমরান, সূরা মুহাম্মদ, সূরা ফাত্হ ও সূরা আহযাবের ১৩৮,২,২৯ ও ৪০ নং আয়াতে তাঁকে ‘মুহাম্মদ’ নামে এবং সূরা সাফের ৬ নং আয়াতে তাঁকে ‘আহমদ’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। তাঁর এ দু’নাম থাকার কারণ হচ্ছে এই যে,মহানবীর মা হযরত আমেনা দাদা আবদুল মুত্তালিবের আগেই তাঁর নাম ‘আহমদ’ রেখেছিলেন। আর এ বিষয়টি ইতিহাসেও উল্লিখিত হয়েছে।
।
নূরের নবী
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. মাতা-পিতার মাধ্যমে স্বাভাবিক চিরাচরিত নিয়মে দুনিয়ার বুকে আগমন করলেও তিনি ছিলেন নূরের তৈরি অসাধারণ মহামানব। যারা তাঁকে সাধারণ মানুষ গণ্য করে এবং মহব্বত ও তাজিমের ক্ষেত্রেও একই রকম দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে চলে তাদের জানা, বুঝা ও উপলব্ধির ভুল রয়েছে। এ বিষয়ে তাদের আরো বেশি জ্ঞানার্জন করা প্রয়োজন।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়া’লা এরশাদ করেন-
অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫)
আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বুঝানো হয়েছে। নিম্নে আরো কয়েকটি প্রসিন্ধ তাফসীরের আলোকে দলিল উপস্থাপন করা হলঃ-
বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে আববাস এর মধ্যে আছে-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে ইবনে আববাস পৃষ্ঠা ৭২)।
ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।
হাদিস শরীফের বর্ণনায় নূরের নবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর অসংখ্য নিদর্শন পাওয়া যায়। যেমন,
অর্থঃ হযরত জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবেদন করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার মা-বাবা আপনার কদম মোবারকে উৎসর্গিত, আপনি দয়া করে বলুন, সকল বস্ত্তর পূর্বে সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়া’লা কোন বস্ত্তটি সৃষ্টি করেছিলেন? নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়’লা সমস্ত কিছুর পূর্বে তোমার নবীর (তোমার) নূর মোবারক তাঁরই নূর মোবারক হতে সৃষ্টি করেছেন অতঃপর ওই নূর আল্লাহ তায়’লারই মর্জি মুতাবেক তাঁরই কুদরতি শক্তিতে পরিভ্রমণ করতে লাগল। ওই সময় না ছিল বেহেশ্ত-দোযখ, আর ছিলনা আসমান-যমীন, চন্দ্র-সূর্য, মানব ও দানব। এক পর্যায়ে মহান আল্লাহ যখন সৃষ্টিজগত পয়দা করার মনস্থ করেছিলেন, প্রথমেই ওই নূর মোবারককে চারভাগে বিভক্ত করে প্রথম অংশ দিয়ে কলম, দ্বিতীয় অংশ দিয়ে লওহ, তৃতীয় অংশ দিয়ে আরশ, সৃষ্টি করে চুতুর্থাংশকে পুণরায় চারভাগে বিভক্ত করে প্রথমাংশ দিয়ে আরশবহনকারী ফেরেশতাদের দ্বিতীয় অংশ দ্বারা কুরসী, তৃতীয় অংশ দ্বারা অন্যান্য ফেরেশতাদের সৃষ্টি করে চুতুর্থাংশকে আবারও চারভাগে বিভক্ত করে প্রথম ভাগ দিয়ে সপ্ত আসমান, দ্বিতীয় ভাগ দিয়ে সপ্ত যমীন, তৃতীয় ভাগ দিয়ে বেহেশত-দোযখ এবং পরবর্তী ভাগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সকল বস্ত্ত সৃষ্টি করে। (আল মাওয়াহিবুল লাদুনিয়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৭১)।
অর্থঃ হযরত কাব আহবার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ পাক রাববুল আলামিন যখন সৃষ্টি জগত সৃজন করার ইচ্ছা করলেন তখন মাটিকে সস্প্রসারিত করলেন, আকাশকে উঁচু করলেন এবং আপন নূও হতে এক মুষ্ঠি নূর গ্রহন করলেন। তারপর উক্ত নূরকে নির্দেশ দিলেন’ তুমি মুহাম্ম্দ হয়ে যাও।’ অতএব সে নূও স্তম্ভের ন্যায় উপরের দিকে উঠতে থাকল এবং মহত্বের পর্দা পর্যন্ত পৈাছে সিজদায় পরে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ্’ তখন আল্লাহ্ পাকের পক্ষ থেকে ইরশাদ হল,এজন্যই তোমাকে সৃষ্টি করেছি আর তোমার নাম মুহাম্ম্দ রেখেছি। তোমার হতেই সৃষ্টি কাজ শুরু করব এবং তোমাতেই রিসালাতের ধারা সমাপ্ত করব । (সিরাতুল হালাভিয়া ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৫০)।
অর্থঃ ”হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি রাত্রে বাতির আলোতে বসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাপড় মোবারক সেলাই করেছিলাম। এমন সময় প্রদীপটি (কোন কারণে) নিভে গেল এবং আমি সুচটি হারিয়ে ফেললাম। এরপরই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্ধকার ঘরে প্রবেশ করলেন। তাঁর চেহারা মোবারকের নূরের জ্যোতিতে আমার অন্ধকার ঘর আলোময় হয়ে গেল এবং আমি (ঐ আলোতেই) আমার হারানো সুচটি খুজে পেলাম”। (ইমাম ইবনে হায়তামী (রাঃ) এর আন-নে’মাতুল কোবরা আলার আলম গ্রন্থে ৪১ পৃষ্ঠা)।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
অর্থঃ হযরত ইবনে আলী ওমর আল-আদানী স্বীয় মুসনাদে হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করলেন, তখন তাঁকে তাঁর সন্তানদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদার তারতম্যটুকুও দেখাতে লাগলেন। তিনি ( আদম আলাইহিস সালাম ) তাদের মধ্যে শেষপ্রান্তে একটা উজ্জ্বল নূর দেখাতে পেলেন। তখন তিনি বললেন,” হে রব! ইনি কে? ( যাকে সবার মধ্যে প্রজ্জ্বলিত নূর হিসাবে দেখতে পাচ্ছি?) উত্তরে মহান রববুল আলামীন ইরশাদ করলেন,” ইনি হলেন তোমার পুত্র-সন্তান হযরত আহমদ মুজ্তবা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি প্রথম, তিনি শেষ, তিনি হবেন আমার দরবারে প্রথম সুপারিশকারী (ক্বিয়ামতের দিনে)। ( আল-খাসাইসুল কুবরা ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯)
ইমাম হাফেজ আবুল ফযল ক্বাযী আয়ায (রা) বলেন-
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা কোরআন করীমে তাঁর নাম রেখেছেন নূর ও সিরাজুম্ মুনীর। যেমন তিনি ফরমায়েছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর ও স্পষ্ট কিতাব এসেছে। আরো ফরমায়াছেন, আমি তো আপনাকে পাঠিয়েছি হাজের ও নাজেররূপে, আল্লাহর অনুমক্রিমে তাঁর দিকে আহবানকারীরূপে এবং উজ্জ্বল প্রদীপ (সিরাজুম মুনীর ) রূপে। নিশ্চয়ই তাঁর ছায়া ছিল না. না সূর্য়ালোকে না চন্দ্রালোকে কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীল ও পোশাক মোবারকে মাছি বসত না। (শিফা শরীফ ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৪২)।
অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল সা. এর রূহ মোবারক আদম আ. সৃষ্টির দু’হাজার বছর পূর্বে আল্লাহ তায়ালার সামনে নূর হিসেবে ছিল । ঐ নূর আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তেছিল এবং তার দেখাদেখি ফেরেশতারা আল্লাহ তায়ালার তাসবীহ পড়তেছিল। অত:পর আল্লাহ তায়ালা যখন আদম আ. কে সৃষ্টি করলেন ঐ নূর তার মেরুদণ্ডে দিয়ে দিলেন। রাসূল পাক সা. বলেন, অত:পর আল্লাহ তায়ালা আমাকে আদমের মেরুদণ্ডে করে দুনিয়ায় নামান এবং বংশানুক্রমে আমাকে নূহ আ. এর মেরুদণ্ডে দেয়া হয়। এরপরে আমাকে ইবরাহীম আ. এর মেরুদণ্ডে নিক্ষেপ করা হয়। এভাবে আল্লাহ তায়ালা আমাকে সম্মানিত মেরুদন্ড ও পবিত্র রেহেমের মাধ্যম করে স্থানান্তর করেন এমনকি আমার পিতামাতার মাধ্যমে আমাকে জগতে আবির্ভাব ঘটান। তারা কখনো অনাচার করেনি।” (শরহুশ শেফা লি আলী আল কারী, খ ১, পৃ ২০৬)
সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ফি সিরাতি খাইরিল ইবাদ কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৯পৃষ্ঠায় আছে, وفي كتاب الأحكام للحافظ الناقد أبي الحسن بن القطان: روى علي بن الحسين ، عن أبيه عن جده مرفوعا: ” كنت نورا بين يدي ربي عز وجل قبل أن يخلق آدم بأربعة عشر ألف عام “. বিশিষ্ট হাদীস সমালোচক মুহাদ্দিস আবুল হাসান ইবনুল কাত্তান তার কিতাবুল আহকামে বলেন- আলী বিন হাসান রা. তার পিতার মাধ্যমে দাদা (হযরত আলী রা.) এর থেকে বর্ণনা করেন যে, (মহানবী সা. বলেন,) আমি আদম আ. সৃষ্টির চৌদ্দ হাজার বছর পূর্বে আমার প্রভূর সামনে নূর আকারে ছিলাম।
কানজুল উম্মাল ৩২০৫৬ নং হাদীস খ ১১, পৃ ১৯৭ / বাইহাকী ৫ম খন্ড পৃ ৪৮৩ : لما خلق الله عزوجل آدم خبره ببنيه فجعل يري فضائل بعضهم على بعض فرأى نورا ساطعا في أسفلهم فقال : يا رب ! من هذا ؟ قال : هذا ابنك أحمد ، هو الاول وهو الاخر ، وهو أول شافع وأول مشفع. (ابن عساكر – عن أبي هريرة). রাসূল পাক সা. বলেন, আল্লাহ তায়ালা যখন আদম আ. কে সৃষ্টি করে তাকে তার সন্তান সম্পর্কে সংবাদ দেন, তখন তিনি কতেক সন্তানের উপর অপর কতেকের মর্যাদা দেখতে পান। তিনি নিচের দিকে একটি উজ্জ্বল নূর দেখতে পেয়ে বললেন, হে প্রভূ, এ কে ? আল্লাহ তায়ালা বললেন, এ হলো তোমার পুত্র আহমদ। সেই প্রথম (সৃষ্টির দিক থেকে) এবং সেই শেষ (প্রেরণের দিক থেকে)। সেই প্রথম সুপারিশকারী এবং তার সুপারিশই প্রথম কবুল করা হবে।
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেন, আমি সৃষ্টির দিক থেকে নবীদের মধ্যে প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে তাদের সর্বশেষ। (কানযুল উম্মাল, হাদীস নং ৩২১২৩) বুঝা গেল, আল্লাহ তায়ালা মহানবী সা. এর রূহ মোবারকে নূর প্রথমে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তা আদম আ. এর পেশানীতে দিয়ে দিয়েছিলেন। যা বংশানুক্রমে মহানবী সা. এর পিতা আব্দুল্লাহর পেশানীতে এসে শোভা পায়।
তাফসীরে কবীর সূরা বাকারার ২৫৩নং আয়াতের ব্যাখ্যায় আদম আ. এর উপর মহানবী সা. এর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, أن الملائكة أمروا بالسجود لآدم لأجل أن نور محمد عليه السلام في جبهة آدم . নিশ্চয় ফেরেশতাদেরকে আদম আ. কে সাজদা করতে আদেশ করা হয়েছিল। কারণ, আদম আ. এর পেশানীতে মুহাম্মাদ সা. এর নূর ছিল। অনুরূপ আছে, তাফসীরে লুবাব খ ৩, পৃ ২৩৩ এবং তাফসীরে নিশাপুরী খ ২, পৃ ১০৭
তবাকাতে ইবনে সাদ, ১ম খ-ের ৬৫ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, আব্দুল্লাহর পেশানীতে নবী সা. এর নূর ছিল। যেমন, وأخبرنا وهب بن جرير بن حازم أخبرنا أبي قال سمعت أبا يزيد المدني قال نبئت أن عبد الله أبا رسول الله صلى الله عليه و سلم أتى على امرأة من خثعم فرأت بين عينيه نورا ساطعا إلى السماء فقالت هل لك في قال نعم حتى أرمي الجمرة فأنطلق فرمى الجمرة ثم أتى امرأته آمنة بنت وهب ثم ذكر يعني الخثعمية فأتاها فقالت هل أتيت امرأة بعدي قال نعم أمرأتي آمنة بنت وهب قالت فلا حاجة لي فيك انك مررت وبين عينيك نور ساطع إلى السماء فلما وقعت عليها ذهب فأخبرها أنها قد حملت خير أهل الأرض রসূল সা. এর পিতা আব্দুল্লাহ খাসয়াম গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলে সে তাঁর দু’চোখের মাঝে আকাশ পর্যন্ত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেল। সে বলল, তোমার কি আমাতে প্রয়োজন আছে ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে আমি জামরায় পাথর মারব। অত:পর তিনি জামরায় পাথর মেরে স্বীয় স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাব এর নিকট গেলেন । পরে যখন খাসয়ামী মহিলার কথা মনে পড়লে তিনি তার নিকট আসলেন। সে জিজ্ঞেস করল, তুমি কি আমার সাথে দেখা করার পরে কোন মহিলার সাথে মিলিত হয়েছিলে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। আমার স্ত্রী আমেনা বিনতে ওহাবের সাথে। সে বলল, তাহলে তোমাতে আমার কোন প্রয়োজন নাই। তুমি যখন যাচ্ছিলে আমি তোমার দু’চোখে মধ্যখানে আকাশ পর্যন্ত প্রলম্বিত একটি উজ্জল নূর দেখতে পেয়েছিলাম। আর যখন তুমি তার সাথে মিলিত হয়েছো, সে নূরটি চলে গিয়েছে। আর সে বলল, উক্ত আমেনা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে গর্ভধারণ করেছেন। এ নূরটি ছিল মহানবী সা. এর রূহানী নূর।
সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ কিতাবের ১ম খণ্ডের ৬৮ পৃষ্ঠায় আছে, وروى أبو سعد النيسابوري في الشرف “، وابن الجوزي (৮) في ” الوفا ” عن كعب الأحبار (৯)، قال: لما أراد لله سبحانه وتعالى أن يخلق محمدا – صلى الله عليه وسلم أمر جبريل أن يأتيه بالطينة التي هي قلب الأرض وبهاؤها ونورها، فهبط جبريل في ملائكة الفردوس وملائكة الرفيق الأعلى، فقبض قبضة رسول الله صلى الله عليه وسلم من موضع قبره الشريف، وهي بيضاء نيرة، فعجنت بماء التسنيم في معين أنهار الجنة، حتى صارت كالدرة البيضاء لها شعاع عظيم، ثم طافت بها الملائكة حول العرش والكرسي والسماوات والأرض، فعرفت الملائكة محمدا صلى الله عليه وسلم قبل أن تعرف آدم أبا البشر، ثم كان نور محمد صلى الله عليه وسلم – يرى في غرة جبهة آدم وقيل له: يا آدم هذا سيد ولدك من المرسلين.فلما حملت حواء بشيث انتقل النور عن آدم إلى حواء، وكانت تلد في كل بطن ولدين إلا شيثا فإنها ولدته وحده كرامة لمحمد صلى الله عليه وسلم، ثم لم يزل النور ينتقل من طاهر إلى طاهر إلى أن ولد صلى الله عليه وسلم.
আবু সাইদ নিশাপুরী তার আশ শরফ কিতাবে এবং ইবনুল জাওজী তার আল ওয়াফা কিতাবে কাবে আহবার রহ. থেকে বর্ণনা করেন, যখন আল্লাহ তায়ালা মহানবী সা. এর দেহ মুবারক তৈরী করা ইচ্ছা করেন, জিবরীল কে আদেশ করলেন ঐ মাটি আনার জন্য যা হলো পৃথিবীর অন্তস্থল, উহার সৌন্দর্য এবং উহার নূর। অত:পর জিবরীল আমীন ফেরদাউস ও রফীকে আলার ফেরেশতাদেরকে সাথে নিয়ে নেমে আসলেন এবং রসূল সা. এর কবর শরীফের থেকে এক মুঠ মাটি গ্রহণ করলেন। দেখা গেল, তা ছিল ধবধবে সাদা এবং নূরান্বিত বা আলো বিচ্ছুরণ করছে। অত:পর উক্ত মাটিকে জান্নাতের তাসনীম নহরের পানি দ্বারা গোলানো হলো ফলে তা সাদা মুক্তার মতে হয়ে গেল, যা থেকে বিরাট বিচ্ছুরণ হচ্ছিল। অত:পর ঐ মাটি নিয়ে ফেরেশতার আরশ, কুরসী, আকাশ ও পৃথিবীতে ঘুরলেন। ফলে, ফেরেশতার আদম আ. কে চেনার পূর্বে মুহাম্মাদ সা. কে চিলনেন। অত:পর আদম আ. এর কপালে উক্ত নূর দিয়ে দেয়া হলো এবং বলা হলো এ হলো তোমার সন্তান এবং সকল রসূলদের সেরা। অত:পর যখন মা হাওয়া শীস আ. কে গর্ভধারণ করলেন তখন উক্ত নূর মা হাওয়ার নিকট চলে আসল। মা হাওয়ার প্রতিবার দু’টি করে সন্তান প্রসব করতেন। সেবার মহানবী সা. এর সম্মানে একটি সন্তান প্রসব করলেন। এভাবে উক্ত নূর পবিত্র ব্যক্তিদের পরম্পরায় এসে মহানবী সা. ভূমিষ্ট হলেন। অনুরূপ আছে মোল্লা আলী আল কারীর মিরকাত শরহে মেশকাতের ১৬ খ- ৪০২পৃষ্ঠায় (শামেলা)।
সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ এর ১ম খণ্ডের ৬৯পৃষ্ঠায় আছে, قال ابن القطان: فيجتمع من هذا مع ما في حديث علي: أن النور النبوي جسم بعد خلقه باثني عشر ألف عام . ইবনুল কাত্তান রহ. বলেন, উপরোক্ত হাদীসদ্বয়ের সমন্বয়ে বলা যায় যে,নূরে মুহাম্মাদী সা. কে সৃষ্টি ১২হাজার বছর পর দেহ প্রদান করা হয় ।
সুবুলুল হুদা ওয়ার রশাদ ১ম খণ্ডের ৬৯পৃষ্ঠায় এবং মেশকাতুল মাসাবীহের ৫১৩ পৃষ্ঠায় সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে,
عن العرباض بن سارية عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال : ” إني عند الله مكتوب : خاتم النبيين وإن آدم لمنجدل في طينته وسأخبركم بأول أمري دعوة إبراهيم وبشارة عيسى ورؤيا أمي التي رأت حين وضعتني وقد خرج لها نور أضاء لها منه قصور الشام ” . وراه في ” شرح السنة ” (أحمد ، وابن سعد ، والطبرانى ، والحاكم ، وأبو نعيم فى الحلية ، والبيهقى فى شعب الإيمان عن عرباض بن سارية) و في الدلائل ايضا صـ
হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা. বলেন, আমি আল্লাহ তায়ালার নিকট শেষনবী হিসেবে লিখিত ছিলাম, যখন আদম আ. তার মাটিতে পড়েছিলেন। আমি অচিরেই আমার বিষয়ে তোমাদেরকে সংবাদ দিব। আমি হলাম ইবরাহীম আ. এর দোয়ার ফসল, ঈসা আ. এর সংবাদ এবং আমার মায়ের দেখা, যা তিনি আমাকে ভূমিষ্ট করার সময় দেখেছিলেন যে, তার থেকে নূর বের হয়েছে, তাতে তার জন্য সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়। (শরহুস সুন্নাহ। ) এ হাদীসটি আরো আছে মুসনাদে আহমদ, তবাকাত, তবারানী, হাকেম, আবু নুয়াইম, শোয়াবুল ঈমান এবং দালায়েলুন নুবুয়্যাত এ ।
এ হাদীস থেকে জানা গেল, মহানবী সা. এর জন্মের সময় নূর বের হয়েছিল। তাই বুঝা যায়, তার দেহ মোবারক নূরের ছিল। এরকম আরো বর্ণনা আছে, ইমাম বাইহাকী রহ. এর দালায়েলুন নুবুওয়্যাত কিতাবের ১ম খণ্ডের ১১১ পৃষ্ঠায়, عن عثمان بن أبي العاص ، قال : حدثتني أمي ، أنها شهدت ولادة آمنة بنت وهب رسول الله صلى الله عليه وسلم ، ليلة ولدته . قالت : فما شيء أنظر إليه في البيت إلا نور ، وإني لأنظر إلى النجوم تدنو حتى إني لأقول : ليقعن علي
হযরত উসমান বিন আবুল আস রা. বলেন, আমি মা (ছফিয়্যা) বলেন, আমি ওহাব কন্য আমেনার কাছে রসূল সা. এর জন্মের রাতে উপস্থিত ছিলাম। আমি (তার জন্মের সময়) দেখলাম, ঘরের মধ্যকার সবকিছু নূর হয়ে গেছে। আমি তারকার দিকে তাকালাম। দেখলাম সেগুলো আমার নিকটবর্তী হয়েছে। মনে হয় যেন, উহা আমার উপর পতিত হবে। আবু নুয়াইমের দালায়েলুন নুবুয়্যাতের ৭৬ পৃষ্ঠায় আছে যখন আমেনা রসূল সা. কে ভূমিষ্ট করল, একটি নূর বের হয়ে ঘর আলোকিত করল অত:পর আমি যা দেখলাম দেখি সবই নূর।
এসব হাদীসের আলোকে বুঝা যায়, মহানবী সা. এর দেহ মোবারক সাধারণ কোন মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়নি। বরং তা নূরান্বিত মাটি বা নূরে পরিবর্তিত মাটি দ্বারা তৈরী করা হয়েছে। এভাবে আমরা মহানবী সা. এর সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কে একটি মধ্যবর্তী রায় দিতে পারি যে, তার রূহ মুবারক নূর দ্বারা তৈরী এবং তা ছিল খলকী নূর। এবং তার দেহ মুবারক নূরে পরিবর্তিত মাটি তথা নূরান্বিত মাটি দ্বারা তৈরী। কিন্তু যেহেতু, দেহ ও রূহ এর মধ্যে রূহই প্রধান। তাই তাকে নূরের নবী বলা হয়। তাছাড়া তার দেহ মুবারকও তো সাধারণ মাটি নয় বরং নূরান্বিত মাটি দ্বারা তৈরী।
মোট কথা, মহানবী সা. এর সৃষ্টির উপাদান সম্পর্কিত এ ঐতিহাসিক বিষয়টি মিমাংসার জন্য ঐতিহাসিক বর্ণনাগুলিই যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন।