সূফীবাদ

 

ইলমে তাসাউফ

আহলুল সুফফা

আসহাবে সুফফার উল্লেখযোগ্য ২৪ জন সদস্য

সূফীবাদ

উপমহাদেশে সূফীবাদ

ইলমে তাসাউফ

মানুষের জীবনের দুটি দিক রয়েছে। একটি বাহ্যিক আর অপরটি অদৃশ্য বা আত্মিক। ইসলাম মানুষের বাহ্যিক জীবন ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় বিধান দিয়েছে। যার নাম শরিয়াত। একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে মানুষের অদৃশ্য আত্মিক দিকটি পরিচালনার জন্যও ইসলামকে প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান এবং নীতি আদর্শ দিতে হয়েছে। এ বিধানাবলীর সাধারণ ও প্রচলিত নামই তাসাউফ। হযরত মুহাম্মাদ সা. ইসলামের যাহিরি বা বাহ্যিক শিক্ষা সকল সাহাবী রা. কেই দিয়েছেন। তাদেরকে অন্তর পবিত্র ও শুদ্ধ করার শিক্ষা দিয়েছেন। বিশেষ করে এ শিক্ষা পেয়েছেন হযরত আবু বকর, হযরত ‘উমার, হযরত উসমান ও হযরত ‘আলী রা.সহ পৃথিবীতেই জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া দশজন সাহাবী রা.। পরবর্তীতে হযরত আবু বকর রা. সূত্রে সালমান আল ফারসী রা. এবং হযরত ‘আলী রা. সূত্রে হাসান আল-বসরী রা. ইসলামী জীবণাচারের বাতেনী এ দিক সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করেন। এভাবেই তাসাউফের শিক্ষা বিস্তৃত হয়।

নবী করীম সাঃ এর ইন্তেকালের পর হইতে সূচনা হয় ইলমে বেলায়েতের ধারা। খোলাফায়ে রাশেদীন, আসহাবে সুফফা বিশেষতঃ হযরত আলী রাঃ এর মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বেলায়েত শুরু হয়। অতঃপর তাবেঈন, তাবে-তাবেঈনগণের একাংশ প্রকৃত ইসলামের এই ধারাকে অব্যাহত রাখেন। তাঁহারাই ইসলামের ইতিহাসে সূফী-সাধক নামে পরিচিত।

আহলুল সুফফা

আহলে সুফফা দুইটি শব্দ। ‘আহল’ শব্দের অর্থ পরিবার, সদস্য ইত্যাদি। ‘সুফফা’ শব্দের অর্থ পশম, পরিশুদ্ধ ইত্যাদি। তাই আহলে সুফফার আভিধানিক অর্থ হইল পশমী জামা পরিহিত সদস্যবৃন্দ, কিংবা আত্ম-পরিশুদ্ধ দলের সদস্যবৃন্দ। পারিভাষিক অর্থে আহলে সুফফা নবী করীম সাঃ এর সেই সকল সাহাবীকে বলা হয়, যাহারা রাসূল সাঃ এর ভালবাসায় দিবা-রাত্রি আত্ম-পরিশুদ্ধিতে ব্রত থাকিতেন। তাঁহাদের পোষাক ছিল পশমী। তাঁহারা রাসূল সাঃ এর প্রেমে এমনই বিভোর ছিলেন যে, তাঁহাকে একনজর দেখিবার জন্য মসজিদে নববীর সংলগ্ন অবস্থানে তাঁহারা দিবা-রাত্রি অপেক্ষা করিতেন। সেই সঙ্গে নানা অজিফা পাঠ করিতেন। তাঁহাদের সংখ্যা ছিল সত্তর জন। মতান্তরে কমবেশি ছিল।

মহানবী (সা.) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকার মধ্য দিয়ে এ ধারার সূচনা করেন। পরবর্তীতে কর্মময় তেইশ বছরের নবুয়তি জিন্দিগীতে অসংখ্যবার তন্ময়তা-ধ্যান মগ্নতায় তিনি অনন্য হয়ে ওঠেন। মহানবী (সা.) এর সময়েই একদল সাহাবী আধ্যাত্মিকতার গুরত্ব অনুধাবন করে মাসজিদে নববীতে সারাক্ষণ ধ্যানমগ্ন থাকতেন। যাদেরকে ‘আহলি সুফ্ফা’ বলা হতো। খুলাফায়ে রাশেদূনের মধ্যে প্রধানত হযরত আলী (রা.) এবং সাহাবীদের মধ্যে ইবন মাসউদ (রা.) তাসাউফের ক্রমবিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পরবর্তী সময়ে আবুল হাশিম কুফী, হাসান বসরী, যাবির ইবন হাইয়্যান, রাবিয়া বসরী (রা.) প্রমুখ তাসাউফের স্বতন্ত্র ধারার সূচনা করেন। শুরু হয় কৃচ্ছ্রতা সাধনার মাধ্যমে তাসাউফ সাধনার নতুন যুগের।
রাসূল সাঃ এর ইন্তেকালের পর খেলাফতের বহুমুখী দ্বন্দ্ব ও মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্রের ফলে আসহাবে সুফফা জন বসতি ত্যাগ করিয়া নির্জনে চলিয়া যান। তাই পরবর্ত্তী সূফিয়ায়ে কেরাম আসহাবে সুফফার অনুসরণে রাজনীতি মুক্ত থাকিয়া খানকাহ্ শরীফ কেন্দ্রিক ধর্ম্ম প্রচারে নিয়োজিত হন। অদ্যাবধি সেই ধারাই অব্যাহত রহিয়াছে। তাই শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ স্বীয় ভক্ত-মুরিদানদের রাসূল সাঃ এর আসহাবে সুফফার প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধার জন্য তাগিদ দিয়াছেন।

আসহাবে সুফফার উল্লেখযোগ্য ২৪ জন সদস্য

১. আবু হুরায়রা (রাঃ) (মৃ ৫৭ হি)

২. আবু জর গিফারী (রাঃ) (মৃ ৩২ হি)

৩. কাব ইবনে মালেক আল আনসারী (রাঃ) (মৃ ৩৪ হি)

৪. সালমান ফারসী (রাঃ) (মৃ ৩৪ হি)

৫. হানজালা ইবনে আবু আমির (রাঃ)

৬. হারিসা ইবনে নুমান (রাঃ)

৭. হুজায়ফা ইবনুল য়ামান (রাঃ)

৮. আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)

৯. সুহায়ব ইবনে সিনান রুমি (রাঃ)

১০. সালেম মাওলা আবি হুজায়ফা (রাঃ)

১১. বিলাল বিন রাবাহ (রাঃ)

১২. সা’দ বিন মালিক আবু সাইদ খুদরী (রাঃ)

১৩. আবূ উবায়দাঃ ‘আমির ইবনুল জাররাহ (রাঃ)

১৪. মিকদাদ ইবনে আমের (রাঃ)

১৫. আবু মারছাদ (রাঃ)

১৬. আবু লুবাবা (রাঃ)

১৭. কাব ইবনে আমর (রাঃ)

১৮. আবদুল্লাহ ইবনে উনায়স (রাঃ)

১৯. আবু দ্দারদা (রাঃ) (মৃ ৩২ হি)

২০. ছাওবান [মাওলা রাসুলিল্লাহ (সঃ)] (রাঃ)

২১. সালিম ইবনে উমায়ের (রাঃ)

২২. খাব্বাব ইবনে আরাও (রাঃ)

২৩. মিসতাহ ইবনে উছাছা (রাঃ)

২৪. ওয়াছিলা ইবনুল আসকা (রাঃ)

সূফীবাদ

 ‘সূফী’ শব্দের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানা মতভেদ রহিয়াছে। আরবী ভাষায় ‘সূফ’ শব্দের অর্থ পশম। রাসূল সাঃ অনাড়ম্বর পশমী কম্বল ব্যবহার করিতেন এবং মদিনার মসজিদে অবস্থানকারী তাঁহার কতিপয় সাহাবায়ে কেরামও সাদাসিধা পশমী কম্বল পরিধান করিতেন। তাই তাঁহাদেরকে ‘আহ্লুস সুফফা’ বা সূফী বলা হইত। কোন কোন চিন্তাবিদের অভিমত সাফা (পবিত্রতা) শব্দ হইতে ‘সূফী’ শব্দের উদ্ভব। গ্রীক ভাষায় ‘সোফিয়া’ শব্দের অর্থ জ্ঞান। পাশ্চাত্য চিন্তাবিদগণের অভিমত ‘সোফিয়া’ শব্দ হইতে সূফী শব্দের উৎপত্তি। ‘সূফ’ শব্দের বহু বচন আসওয়াফ। এই শব্দ কুরআন পাকে ব্যবহৃত হইয়াছে।
হযরত আবদুল্লাহ খফিফ রাঃ এর অভিমত হইল, আল্লাহ পাক যাঁহাকে ভালবাসেন এবং যাঁহার আত্মাকে পবিত্র করিয়াছেন, তিনিই প্রকৃত সূফী। আল্লাহ পাক মহানবী সা. এর আত্মাকে পবিত্র করিয়াছেন বলিয়া তিনি সূফীকুল সম্রাট। ব্যাপক অর্থে তিনি মোস্তফা  নামে আখ্যায়িত। অনেক সময় অলি আল্লাহ এবং সূফী একই অর্থে ব্যবহৃত হয়।
আর যিনি সূফী, তিনিই অলি আল্লাহ। অর্থাৎ যিনি আল্লাহকে জগতের সকল কিছু হইতে অধিক ভালবাসেন। তিনি স্বীয় ইচ্ছাকে বিলীন করিয়া আল্লাহর ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল থাকেন। সূফীগণ আল্লাহর নামে জীবিত থাকিয়াও মৃত। তাই আল্লাহ তায়ালাও সূফীকে অধিক মহব্বত করিয়া থাকেন। তাঁহাদের প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হইয়াছে-
“তিনি (আল্লাহ) তাঁহাদেরকে (অলি-আল্লাহগণকে) ভালবাসেন এবং তাঁহারাও তাঁহাকে ভালবাসেন।”
সূফী মতবাদ আল্লাহর প্রেম এবং ধ্যানের উপর প্রতিষ্ঠিত। সূফীবাদে ধারণাগত বা বিশ্লেষণাত্মক জ্ঞানের স্থান নাই, ইহা সজ্ঞা মূলক আত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। সূফীর ব্যক্তি-চেতনা প্রেম ও ধ্যানের মাধ্যমে অসীম চেতনার মধ্যে ব্যাপ্তি লাভ করে। পরম সত্তার মধ্যে ব্যক্তি চেতনা উজাড় করিয়া দিয়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করিতে তাঁহারা নিরন্তর চেষ্টা চালাইয়া থাকে। আল্লাহ সম্বন্ধে পরম জ্ঞান লাভ করিয়া পরমাত্মার সহিত একাত্ম হওয়াই সূফীগণের লক্ষ্য। অন্যদিকে দার্শনিকগণ পরম সত্যকে জানিতে চেষ্টা করিয়া থাকে, আর সূফী সেই সত্য মনে প্রাণে উপলব্ধি করিতে পারে।
দর্শন বিদ্যা আল্লাহ তায়ালা সম্পর্কে যুক্তি ও প্রমাণ দ্বারা জ্ঞান দান করিয়া থাকে, কিন্তু আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করিতে অসমর্থ। অন্যদিকে সূফী আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে সজ্ঞা লব্ধ বাস্তব জ্ঞান লাভ করিয়া থাকে। তাই দর্শন-বিজ্ঞানের জ্ঞান সূফীর জ্ঞানের নিকট-মস্তক অবনত।
সূফীগণ আল্লাহ তায়ালা হইতে ঐশী ক্ষমতায় ধন্য। তাঁহারাই আল্লাহ তায়ালার প্রকৃত খলিফা (প্রতিনিধি)। অলি-আল্লাহগণ কাশফ এবং সংজ্ঞা দ্বারা দর্শন বিজ্ঞান বা অন্য যে কোন বিষয়ের সমাধান মুহূর্ত্তে দিতে পারিবেন। ইহাকেই কারামত (অলৌকিক কার্য্য) বলা হয়।
তাঁহারা আল্লাহ প্রেমে আত্মাহুতি দিয়া পরম প্রেমাষ্পদের ইচ্ছায় মাথা নত করিয়া থাকেন। তাঁহাদের মধ্যে আক্ষরিক, দার্শনিক বা বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের অভাব থাকিলেও তাঁহাদিগকে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় প্রেম সুধা পান করাইয়া তাঁহার তরফ হইতে অফুরন্ত ঐশী জ্ঞান দান করিয়া থাকেন। ইহাকে ইলমে লাদুন্নী বলা হয়।
যে কোন ব্যক্তি আল্লাহর অলি বা প্রকৃত পীর মোর্শেদের সান্নিধ্যে থাকিয়া পরম জ্ঞানময় আল্লাহ তায়ালার গায়েবী ইলম লাভ করিয়া ইনসানে কামিলে পরিণত হইতে পারেন।
আল্লাহ প্রেমিকগণ জাগতিক সকল কিছুর মোহ মুক্ত! তাঁহারা শরীয়তের বিধি-বিধান প্রয়োজনানুপাতিক গ্রহণ করিয়া থাকেন। আল্লাহ পাক স্বীয় জ্ঞানে তাঁহাদের জ্ঞানবান করিয়াছেন, গুণে গুণান্বিত করিয়াছেন এবং স্বীয় শক্তিতে শক্তিমান করিয়া অলি রূপে বরণ করিয়াছেন। আল্লাহ প্রেমই সূফীর প্রধান সম্পদ। সূফী মতবাদের মূলনীতি প্রেম, প্রীতি, ধ্যান, মননশীলতার মাধ্যমে ইচ্ছা শক্তির বিলোপ সাধন। যখন পরম প্রেমাষ্পদের ইচ্ছা তাঁহাদের মাঝে পরিস্ফুট হয়, তখন তাঁহাদের অসাধ্য কোন কাজই থাকে না।
শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত ও মারেফাত এই কয়েকটি পর্য্যায় সূফী-সাধকের অতিক্রম করিতে হয়। তাঁহাদের কার্য্যকলাপ সাধারণ জ্ঞানাতীত। ইলমে তাসাউফ (আধ্যাত্মিক জ্ঞান)-এর নিগূঢ় তত্ত্ব জ্ঞান অভাব হেতু অনেক জাহেরী উলামা আল্লাহ প্রেমিকগণের প্রতি কটাক্ষ করিয়া থাকেন। শরীয়ত ইসলামের প্রাথমিক স্তর এবং আনুষ্ঠানিক ক্রিয়া কলাপে সীমিত। আর তরীকত শিক্ষা দেয় হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর অনুকরণে স্বীয় জীবন গঠন পদ্ধতি। মারেফাত শিক্ষা দেয় প্রেম, প্রীতি, ত্যাগ, ধ্যান, ধৈর্য্য, পর্যবেক্ষণ এবং আল্লাহ ও বান্দার নিগূঢ় তত্ত্ব সমূহ। হাকীকত পর্য্যায়ে সাধক বাস্তব অনুভূতির মাধ্যমে সত্য তত্ত্ব ও দিব্য দর্শন লাভ করিয়া আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছা সত্তায় স্বীয় সকল সত্তা বিলীন করিয়া দেয়।
অন্যদিকে নৈষ্টিক উলামাদের অন্তর আমিত্ব বস্ত্রে আচ্ছাদিত। আমিত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত অপরের অশোভনীয়। সূফীগণ আমিত্ব বিদায় দিয়া মানবীয় গুণ পরিত্যাগ করিয়া আল্লাহ তায়ালার গুণাবলীর বস্ত্র পরিধান করিয়া ‘সিবগাল্লাহ’ (আল্লাহর গুণে গুণান্বিত) হইয়া যায়।
সূফীবাদে একজন সালেকের জন্য চারটি স্তর রহিয়াছে। ১. ফানা ফিশ-শায়খ (পীরের প্রেমে বিলীন হওয়া), ২. ফানা ফির-রাসূল সাঃ (রাসূল সাঃ এর প্রেমে বিলীন হওয়া), ৩. ফানা ফিল্লাহ (আল্লাহ তায়ালার প্রেমে বিলীন হওয়া)- এই তিনটি স্তর সালেক অতিক্রম করিলে ‘বাকা বিল্লাহ’র (আল্লাহর সত্তায় স্বীয় সত্তা বিলোপ করিয়া চির স্থায়িত্ব) লাভ করিয়া থাকে। এই সমস্ত স্তর অতিক্রম করিতে হইলে যোগ্যতম পথ প্রদর্শকের আবশ্যক, অর্থাৎ কামেল পীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বর্ত্তমান মুসলিম জাহান হানাফী, মালিকী, হাম্বলী এবং শাফেয়ী- এই চার মাজহাবে বিভক্ত। কিন্তু প্রত্যেক মাজহাবের ইমাম এবং তাঁহাদের অনুসারীগণ রাসূলুল্লাহ সাঃ এর প্রকৃত তাঁবেদার এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞানবিশিষ্ট উচ্চ দরজার সাধক ছিলেন। সকল মাজহাব কর্তৃক সূফীবাদ সমর্থিত। প্রত্যেকের উদ্দেশ্য একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভ করা; সুতরাং প্রত্যেক মাজহাবের লোক একে অন্যকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখিয়া থাকেন। প্রত্যেক মাজহাবের ইমামগণ তরীকতপন্থী। এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন তরীকার প্রধান পীরগণ সকলেই রাসূল সাঃ এর অনুসারী ; কাজেই এক মাজহাবের লোক অপর মাজহাবের পীরের নিকট বায়াত গ্রহণ করিতে কোন বাধা নাই।
অবশ্য আল্লাহ প্রাপ্তির পথে বহু তরীকা বিদ্যমান রহিয়াছে। তন্মধ্যে কয়েকটি তরীকা পুরাতন ঐতিহ্য বহন করিয়া চলিয়াছে। যেমন- কাদেরিয়া, চিশতিয়া, নকশবন্দিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, সোহরাওয়ার্দিয়া, ওয়াইসিয়া, মাসুমিয়া ইত্যাদি। উক্ত তরীকা সমূহের আধ্যাত্মিক সাধনা এবং অনুশীলনীর ধারা বিভিন্ন হইলেও মূল উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। যে কোন তরীকায় সাধনার মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন সম্ভব।

উপমহাদেশে সূফীবাদ

সাহাবা যুগের পর তাসাউফ ক্রমবিকাশের ব্যাপ্তি পাক-ভারত উপমহাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে। এতে নেতৃত্ব দেন খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী রহ.। এ যুগের অন্য শ্রেষ্ঠ সূফী ছিলেন নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহ.। এ সময়ে এ দেশে কাদেরিয়া, মুজাদ্দিদীয়া, নকশবন্দীয়া ও চিশতীয়া তরিকার প্রসার ঘটে। বখতীয়ার খলজী বাংলা বিজয়ের পর সূফী সাধকগণ বাংলাদেশে আসেন এবং তাদের প্রচেষ্টায় ইসলাম বিজয়ী শক্তি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ সময়ের সূফীদের মধ্যে হযরত শাহজালাল, শাহ পরাণ, শাহ মাখদুম, সুলতান মাহী সাওয়ার রহ. প্রমুখ অন্যতম।