বিশিষ্ট আশেকে ওয়াইসী
ওয়াইসী পাকের আওলাদগণের সহিত সুসম্পর্ক
ওয়াইসী কেবলার খলিফাগণের প্রতি শ্রদ্ধা
হযরত ওয়াইসী রাঃ এর মাজার শরীফ ও মসজিদ সংস্কার
বায়তুল আকসার আদলে হযরত ওয়াইসী’র মাজার
পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ
৮০ বৎসর পর পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশ
আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী মা.জি.আ.
রাসূলনোমা পীর হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর অন্যতম মুরিদ-খলিফা শামসুল উলামা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ এর কনিষ্ঠ পৌত্র এবং মহান আল্লাহর অলি হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরশাহ রাঃ এর পুত্র আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর ভালবাসা মুগ্ধ পাগল প্রেমিক। তিনি এমনই আশেক যিনি স্বয়নে-স্বপনে নিদ্রা-জাগরণে জীবনে প্রতিটি ক্ষণে প্রতিটি কর্মে হযরত ওয়াইসী কেবলার স্মরণে বিভোর হয়ে যান। মনে হয় তাঁহার জন্মই যেন হযরত ওয়াইসী কেবলা রাঃ এর ভালবাসার জন্য, তাঁহার জীবনই যেন হযরত ওয়াইসী কেবলার প্রেমে, তাঁহার কর্মই যেন হযরত ওয়াইসী কেবলার আশেকী মনোভাবে, তাঁহার প্রতিটি বাণীই যেন হযরত ওয়াইসী কেবলার স্তুতিতে ভরপুর। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এমন পাগল প্রেমিক হওয়া দুনিয়াতে খুব কম মানুষের ভাগ্যে নির্ধারণ করে থাকেন। তাই বলতে হয় আলহাজ্জ্ব হযরত খাজা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদী নূরী হযরত ওয়াইসী কেবলার ভালবাসা দিয়েই নিজের জন্মকে স্বার্থক রূপদান করিয়াছেন।
হযরত ওয়াইসী পাক পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবে লিখেছেন,
‘ওয়াইসিয়া’ আয দীন অ ঈমাঁ ইঁ
কদর দানিম অ বাস
দ্বীনে মা ইশকে মুহাম্মদ সাঃ
হুব্বে উ ঈমানে মা ॥
অর্থ : হে ওয়াইসী ! দ্বীন ও ঈমান সম্পর্কে
এতটুকু জানি এবং তাহাই যথেষ্ট যে,
আমাদের দ্বীন হইল মুহাম্মদ সাঃ এর
ইশক ও তাঁহার প্রতি প্রেমই আমাদের ঈমান।
মনে হয় হযরত ওয়াইসী পাক কেবলার পবিত্র এই বাণী অনুসরণের মাধ্যমেই হযরত খাজা আহমদীনূরী হযরত ওয়াইসী কেবলার প্রতি ভালবাসাকে নিজের দ্বীন ও ঈমান হিসাবেই গ্রহণ করিয়া নিয়াছেন। তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষণে, প্রতিটি মুহূর্তে কোন কাজ শুরু করার পূর্বে বা কোন কথা বলার পূর্বে হযরত ওয়াইসী কেবলার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমেই তাহা শুরু করে থাকেন। হযরত ওয়াইসী কেবলার ভালবাসায় অনুরক্ত হয়ে তিনি তাঁহার স্মরণে গ্রন্থ রচনা করেছেন, ওরোছ শরীফ উদযাপন করছেন, তাঁহার স্মৃতি রক্ষার্থে অসংখ্য স্থাপনা নির্মাণ করছেন এবং তাঁহার নীতি-আদর্শ নিজের জীবনে প্রতিফলনের মাধ্যমে অসংখ্য ভক্ত-আশেককে সত্য সঠিক পথে চলার অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন।
এখানে হযরত ওয়াইসী কেবলার অনন্য আশেক হযরত খাজা আহমদীনূরীর আশেকী কাজ-কর্ম ও মনোভাবের কিছু নিদর্শন উপস্থাপনের চেষ্টা করিব।
।
ওয়াইসী পাকের আওলাদগণের সহিত সুসম্পর্ক
আধ্যাত্মিকতার মূলসূত্র হলো আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি ও সান্নিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে নিজের পীর মোর্শেদ এবং ঊর্ধ্বতন পীর মোর্শেদ হতে শুরু করে রাসূল পাক সাঃ পর্যন্ত সকলের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে তাদের সন্তুষ্টি ও নেক দৃষ্টি অর্জন করা। এ কাজে সাফল্য লাভের উপায় হলো তাঁদের প্রতি মহব্বত রাখা, তাঁদের আনুগত্য পোষণ করা, অনুসরণ করা ও তাঁদের বংশধরদের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা। হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ এ সম্পর্কে খুবই সজাগ। তিনি হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর আওলাদবর্গের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন। তাঁহারা কে কোথায় অবস্থান করছেন, কি করছেন, কিভাবে আছেন ইত্যাদি খোঁজ খবর তিনি রাখেন। তাদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমেও নিয়মিত কুশল বিনিময় করেন।
হযরত খাজা আহমদীনূরীর আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহারে তাঁহারাও ভীষণ অভিভূত। হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রাঃ এর উল্লেখযোগ্য ৩৫ জন খলিফার আওলাদগণের অন্য কেউ তাঁদের সহিত এ ধরনের সম্পর্ক না রাখায় হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার আওলাদবর্গ হযরত খাজা আহমদীনূরীকে বিশেষ নেক নজরে দেখেন।
হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হযরত ওয়াইসী কেবলার আওলাদবর্গকে দাওয়াত করলে তাঁহারাও সানন্দে তা গ্রহণ করেন। বিশেষ করে ঢাকার খানকায়ে সুরেশ্বরীতে হযরত ওয়াইসী কেবলা রাঃ এর বাৎসরিক ফাতেহা শরীফ অনুষ্ঠানে তারা অংশগ্রহণ করে অনুষ্ঠানকে মহিমান্বিত করেন। তাছাড়া পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানেরও তিনি তাঁদেরকে দাওয়াত করেন এবং তাঁহারা দাওয়াত রক্ষা করে হযরত খাজা আহমদীনূরীকে ধন্য করেন। আবার অনেক সময় দেখা যায় দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার আওলাদবর্গ তাসরীফ এনে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য ও মহিমা বর্ধন করেন। তাঁহারা অনেক কষ্ঠ স্বীকার করেও শত মাইল পথ পেরিয়ে সুরেশ্বরের অনুষ্ঠানে যখন যোগ দেন তখন আশেকানে হযরত সুরেশ্বরী রাঃ হৃদয়ে বিশেষ শক্তি ও ফয়েজ বরকত অনুভব করেন। এ সময়ে তারা অনুভব করতে পারেন যে তাঁদের পীর মোর্শেদ কেবলা হযরত খাজা আহমদীনূরী মাঃ জিঃ আঃ এর সহিত হযরত ফতেহ আলী ওয়াইসী কেবলার বিশেষ সুনজর থাকার কারণেই এ ধরনের সম্পর্ক বিদ্যমান রয়েছে।
হযরত ওয়াইসী কেবলা রাঃ এর অনুসরণ এবং তাঁহার আওলাদবর্গের সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করা অবশ্য কর্তব্য মনে করে হযরত খাজা আহমদীনূরী অত্যন্ত আনন্দ, মহব্বত ও নিষ্ঠার সাথে সে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁহার এ কর্ম সকলের জন্যে শিক্ষণীয় ও অনুসরণীয়।
।
ওয়াইসী কেবলার খলিফাগণের প্রতি শ্রদ্ধা
রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর প্রতি অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধার কারণে হযরত আহমদীনূরী হযরত ওয়াইসী কেবলার সকল খলিফার প্রতি অপরিসীম সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন। তিনি সর্বোতভাবে তাঁদের রওজা শরীফের অবস্থান জানতে চেষ্টা করেন এবং তাঁদের আওলাদ-ফরযন্দগণের খোঁজ-খবর নেয়ার চেষ্টা করেন। একই কারণে তিনি তাদের আওলাদগণের প্রতিও ভক্তি-সম্মান প্রদর্শন করেন।
হযরত ওয়াইসী কেবলার অধিকাংশ খলিফার মাজার শরীফ তিনি জেয়ারত করিয়াছেন। এ কারণে তিনি বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করেছেন এবং অশেষ কষ্ট স্বীকার করেও তাদের মাজার শরীফে গেছেন, তাদের আওলাদগণের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন, তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়েছেন। তিনি হযরত ওয়াইসী কেবলা রাঃ এর যে সকল খলিফার মাজার শরীফ জেয়ারত করিয়াছেন তাহাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- মাওলানা আবদুল হক সাহেব রাঃ, গ্রাম ও পোঃ-সিজগ্রাম, জেলা- মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, মৌলভী আইয়াজ উদ্দীন সাহেব রাঃ, আলীপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত, সূফী নিয়াজ আহমদ সাহেব রাঃ, কাটরাপোতা, জেলা- বর্ধমান, ভারত, সূফী একরামুল হক সাহেব রাঃ, পুনাশী, জেলা-মুর্শিদাবাদ, পশ্চিমবঙ্গ, মৌলভী মতিউর রহমান সাহেব রাঃ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, হাফেজ মোঃ ইব্রাহীম সাহেব রাঃ, চট্টগ্রাম, বাংলাদেশ, মৌলভী আবদুল আজিজ সাহেব রাঃ, চন্দ্র জাহানাবাদ, জেলা- হুগলী, মৌলভী আকবর আলী সাহেব রাঃ, সিলেট, বাংলাদেশ, মৌলভী আমজাদ আলী সাহেব রাঃ, ঢাকা, বাংলাদেশ, মৌলভী আহমদ আলী সাহেব রাঃ, ফরিদপুর, বাংলাদেশ, শাহ্ দীদার বখস সাহেব রাঃ, পদ্মপুকুর, জেলা- হাওড়া, ভারত, শাহ্ বাকা উল্লাহ সাহেব রাঃ, কানপুর, জেলা-হুগলী, ভারত, মৌলভী আবু বকর সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, জেলা- হুগলী, ভারত, মাওলানা শাহ্ সূফী গোলাম সালমানী রাঃ, ফুরফুরা, ভারত, মৌলভী গনিমত উল্লাহ সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, ভারত, মুন্সী সাদাকাত উল্লাহ সাহেব রাঃ, ফুরফুরা, ভারত, মুন্সী শারাফাত উল্লাহ সাহেব রাঃ, খাতুন, জেলা-হুগলী, ভারত, শায়খ কোরবান আলী সাহেব রাঃ, বানিয়া তালাব, কলিকাতা, ভারত, শামসুল উলামা মৌলভী মির্জা আশরাফ আলী সাহেব রাঃ, কলিকাতা, সৈয়্যেদ ওয়াজেদ আলী সাহেব রাঃ, মেহেদীবাগ, কলিকাতা, মৌলভী গুল হুসাইন সাহেব রাঃ, খোরাসান, আফগানিস্তান, মৌলভী আতাউর রহমান সাহেব রাঃ, চব্বিশ পরগনা, ভারত, মৌলভী মুবিনুল্লাহ সাহেব রাঃ, রামপাড়া, জেলা-হুগলী, ভারত, মৌলভী কাজী খোদা নাওয়াজ সাহেব রাঃ, ধসা, জেলা- হুগলী, ভারত, মুন্সী সুলায়মান সাহেব রাঃ, বারাসাত, জেলা- চব্বিশ পরগনা, ভারত।
হযরত খাজা আহমদীনূরী হযরত ওয়াইসী কেবলার খলিফাগণের প্রতি কেমন ভালবাসা রাখিতেন তা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল হক সিদ্দিকী রাঃ এর মাজার শরীফের ঘটনায় প্রমাণ পাওয়া যাবে। তিনি ১৯৯৪ খৃষ্টাব্দে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল হক সিদ্দিকী রাঃ এর মাজার শরীফ জেয়ারতের উদ্দেশ্যে সিজগ্রামে যান। জীপে চড়িয়া কলিকাতা হইতে ভোরে মুর্শিদাবাদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন পুনাশী শরীফ। অতঃপর শাহ্পুর শরীফে যান। সেখানে হযরত ওয়াইসী কন্যা র্দোরে মকনুন হযরত সৈয়্যেদা জোহরা খাতুন রাঃ এর মাজার শরীফ জেয়ারত করেন। অতঃপর সিজগ্রামে পৌঁছিতে সন্ধ্যা হইয়া যায়। শরীরও অত্যন্ত ক্লান্ত হইয়া পড়ে। সেখানে হযরত শাহ্ সূফী আবদুল হক রাঃ এর মাজার শরীফের নিকটে পৌঁছিয়া কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করেন, মাজার শরীফ কোথায়? আমরা জেয়ারত করিতে যাইব। তাহারা বলিলেন, এই তো এইখানেই। আপনি আমাদের কাঁধের উপর ভর করিয়া সঙ্গে আসুন। তখন তাহাদের কাঁধে ভর করিয়া তাহাদের হাতের ছিল টর্চ লাইটের আলোতে মাজার শরীফ পর্য্যন্ত যান।
মাজার শরীফে পৌঁছিবার পর তিনি সিজদায়ে তাহিয়্যা করিতে ইতঃস্তত বোধ করিতেছিলেন। কারণ, তাঁহার জানা ছিল না এই দরবার শরীফে সিজদায়ে তাহিয়্যার (সম্মান সূচক সেজদা) প্রচলন আছে কি না। ক্ষণিক পরে দেখিলেন, তাহারা সেজদাবনত হইয়া পড়িয়াছে। তখন তিনিও সেজদায়ে তাহিয়্যা (সম্মান সূচক সেজদা) করেন। আরও চোখে পড়ে, মাজার শরীফের ভিতরেই একটি শেওড়া গাছ। প্রাচীর ঘেরা সযত্মে রক্ষিত, তবে কোন বিল্ডিং নাই, চতুর্দিকে দেওয়াল ঘেরা। সেইখানকার পরিবেশ অত্যন্ত পূতঃ-পবিত্র এবং স্বর্গীয় বলিয়া প্রতীয়মান হয়। অনুভূতি জাগে এইখানে একজন মহান আল্লাহর অলি শায়িত আছেন। জিজ্ঞাসা করিলেন, এই গাছের অবস্থান ও ব্যাখ্যা কি? তাহারা জানাইলেন, এই গাছের পাতা যে কোন নিয়তে খাইলে সঙ্গে সঙ্গে তাহা আল্লাহর রহমতে পূর্ণ হইয়া যায়।
।
হযরত ওয়াইসী রাঃ এর মাজার শরীফ ও মসজিদ সংস্কার
রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর একনিষ্ঠ ভক্ত ও একান্ত অনুগত হযরত আলহাজ্ব শাহ সূফী খাজা আহমদীনূরী। তিনি জীবনের প্রতিটি ক্ষণে নিজ পীর মোর্শেদ ও পিতা কেবলা হযরত নূরশাহ রাঃ, দাদাজান হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী রাঃ ও রাসূলনোমা পীর আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রাঃ এর স্মরণে অভিভূত। তাদের চিন্তা চেতনা দর্শনে তিনি একাত্ম। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার প্রতিফলন দেখা যায়। পুস্তক-পুস্তিকা প্রকাশ থেকে শুরু করে রওজা শরীফ নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ প্রতিটি কার্যে সুগভীর ভালবাসার পরিচয় মিলে। হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার রওজা শরীফ দুই স্থানে অবস্থিত ; কলিকাতা মানিকতলায় এবং দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফে। হযরত খাজা আহমদীনূরী ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিলে ভারত সফরে যান এবং কলিকাতা মানিকতলায় বাবা ওয়াইসী পীর কেবলার মাজার শরীফ জেয়ারত করেন। তিনি মাজার শরীফ ও সংলগ্ন মসজিদের জীর্ণদশা দেখে অত্যন্ত ব্যথিত হন। মাজার শরীফের অপরিসর প্রবেশ পথ ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ দেখে তিনি ওয়াইসী বাবার দরবারে রওজা শরীফ সংস্কারের অনুমতি প্রার্থনা করেন।
এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বহু বিধি-নিষেধ রয়েছে। মসজিদ, মাজার শরীফ নির্মাণের ক্ষেত্রেও আইনের পরিধি খাটো নয়। সুতরাং সুযোগের অপেক্ষায় থাকতে হয়। পরবর্তীতে ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশন গঠিত হওয়ায় এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল জনাব শেখ আহমদ আলী সাহেবের সহযোগিতায় হযরত খাজা আহমদীনূরী ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর-নভেম্বরে হযরত ওয়াইসী বাবার রওজা শরীফের প্রবেশমুখে ‘রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী তোরণ’ নির্মাণ করেন। একইসঙ্গে পবিত্র মাজার শরীফের প্রশস্ত রাস্তা মার্বেল পাথর দিয়ে বাঁধাই করা হয় এবং হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার ৩৫ জন মুরিদ ও খলিফার নামফলক নির্মাণ করে মাজার শরীফের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়। হযরত খাজা আহমদীনূরী এসব কিছুই করেন তাঁহার দাদাজান কেবলা হযরত জানশরীফ শাহ সুরেশ্বরী ওরফে হযরত শাহ আহমদ আলী রাঃ এর স্মরণে।
একই ভাবে মোর্শেদ কেবলাগণের তথা বড় বাবাজান কেবলা হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ, দাদাজান কেবলা হযরত সুরেশ্বরী রাঃ ও বাবাজান কেবলা হযরত নূরশাহ রাঃ এর নেক নজর ও বিশেষ কৃপায় এবং কলিকাতা ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশনের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালে কলিকাতা মানিকতলায় হযরত ওয়াইসী রাঃ এর মাজার শরীফের প্রধান ফটক, ফটক হইতে মাজার শরীফ পর্য্যন্ত মার্বেল পাথরে রাস্তা পাকা করণ ও তাঁহার প্রাণপ্রিয় পঁয়ত্রিশ জন মুরিদ-খলিফার নাম ফলক তৈয়ারীর সৌভাগ্য আল্লাহ তায়ালা তাঁকে দান করিয়াছেন।
।
বায়তুল আকসার আদলে হযরত ওয়াইসী’র মাজার
প্রিয় প্রেমাস্পদকে সাজাইতে কে না চাহে। তাহাকে সাজানোর মধ্যেই তো প্রেমিকের আত্ম-তৃপ্তি। তাই যুগে যুগে নবী করীম সাঃ এর প্রেমিকগণ তাহাদের পরম প্রেমাস্পদের রওজা শরীফকে দৃষ্টিনন্দন করিয়া সাজাইয়াছে। একই ধারায় আশেকে রাসূল সাঃ ও আশেকানে আউলিয়া তাহাদের পরম প্রেমাস্পদ অলি-আউলিয়ার রওজা শরীফকে আকর্ষণীয় ও মনোরম ভাবে সাজাইয়া থাকেন।
শুধু আত্ম-তৃপ্তি লাভ নহে, বরং তাঁহাদের যথোপযুক্ত মর্য্যাদা দান করা এবং মাজার শরীফের পবিত্রতা রক্ষা করাও অতি আবশ্যক। তাই হযরত বড়পীর মহিউদ্দীন আবদুল কাদির জিলানী রাঃ, সুলতানুল আউলিয়া হযরত খাজা মঈন উদ্দীন চিশতী রাঃ, হযরত শাহ্ জালাল রাঃ, হযরত খান জাহান আলী রাঃ প্রমুখ অলি-আউলিয়া কেরামের মাজার শরীফকে তাঁহাদের প্রেমিকগণ মনের মত করিয়া সাজাইয়াছেন। তবে আমরা যাহারা হযরত ওয়াইসী পীর রাঃ এর আশেক বলিয়া দাবি করি, তাহাদের জন্য দুর্ভাগ্য হইতেছে ১২২ বৎসর পার হইয়া গিয়াছে, তবু আমাদের পরম প্রেমাস্পদের মাজার শরীফকে সাজাইয়া তুলিতে পারি নাই।
আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে হযরত খাজা আহমদীনূরী সর্ব্ব প্রথম ১৯৭২ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে হযরত ওয়াইসী পাক রাঃ এর কলিকাতার মাজার শরীফ জেয়ারত করেন। মাজার শরীফের প্রবেশ দ্বার ছিল দক্ষিণে। তখন সেখানে পাঞ্জেগানার নামাজ হইত না। সমগ্র এলাকাটি পরিত্যক্ত ও অযত্মে ময়লা-আবর্জনায় পরিপূর্ণ ছিল। জেয়ারতে বসিতেই তিনি অত্যন্ত অস্থির ও বেহুঁশ হইয়া যান। এমতাবস্থায় হযরত ওয়াইসী কেবলা রূহানী ভাবে এরশাদ করিলেন, “হে বৎস ! শান্ত হও। আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধার সহিত সুরেশ্বরে আহমদ আলীর নিকট মাজারে ভাল আছি।” পরক্ষণেই তিনি জ্ঞান ফিরিয়া পাইলেন। দেখিতে পাইলেন মাজারের পূর্ব্ব পার্শ্বের দেয়ালে কে বা কাহারা পোড়ানোর উদ্দেশ্যে গোবর গোল গোল করিয়া শুকাইতে দিয়াছে। মাজার শরীফ কবে পরিষ্কার করা হইয়াছে তাহা কাহারও জানা নাই। এইরূপ করুণ হাল দেখিয়া তিনি দুঃখ-ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সুরেশ্বরে ফিরিয়া আসিলেন।
অতঃপর ১৯৯৩ খৃষ্টাব্দে মাজার শরীফ সংস্কার করিবার ইচ্ছায় তিনি কলিকাতার উদ্দেশ্যে বিমানে যাত্রা করেন। তখনই বিমানের মধ্যে এক অস্থির অবস্থার মধ্যে হযরত ওয়াইসী পাক তাঁহাকে জানাইলেন, “আপাততঃ আমার মাজার শরীফের সংস্কার কাজ করিও না। বর্ত্তমানে আমার খলিফাগণের নামফলক, মাজার শরীফের গেইট ও জেয়ারতকারীদের জন্য রাস্তা তৈয়ারী করিও। আর আমার রওজা নির্ম্মাণ করিতে চাহিলে ভবিষ্যতে বায়তুল মোকাদ্দাসের আদলে তৈয়ারী করিও।”
অতঃপর আমি ৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৫ খ্রীঃ তারিখে ভক্ত-মুরিদ সহকারে হযরত আহমদীনূরী কলিকাতায় হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার দরবার শরীফে যান এবং স্থানীয় জনসাধারণ এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় ১২ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ খ্রীঃ অনানুষ্ঠানিক ভাবে হযরত ওয়াইসী পীর কেবলার মাজার শরীফের কাজ শুরু করা হয়। ১৫ই সেপ্টেম্বর ২০০৫ রোজ বৃহস্পতিবার হযরত ওয়াইসী কেবলার পৌত্র ব্যারিষ্টার হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ শাহীদ আলম মানিকতলায় উপস্থিত হইয়া স্বহস্তে ভিত্তি গাঁথিয়া এই মহতী কার্য্যে পূর্ণ উৎসাহ ও সম্মতি জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি লিখিত পত্রে মাজার শরীফের কাজ শুরু করিবার এজাজত প্রদান করেন। তাঁহার এজাজত নামা কাজের উৎসাহ-গতি শতগুণে বাড়াইয়া দেয়। ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়া নির্মাণ কাজ চলিতেছিল কিন্তু কতিপয় দুরাচার বিরুদ্ধবাদী স্থানীয় প্রশাসনের নিকট মিথ্যা আপত্তি উত্থাপনের মাধ্যমে মাজার শরীফ নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়।
।
ওয়াইসী খলিফাগণের নাম ফলক
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অপার দয়ায় হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. ১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে মানিকতলার রওজা শরীফে সু-পরিসর ও সু-দর্শনীয় ‘রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী পীর তোরণ’ নির্ম্মাণ এবং হযরত ওয়াইসী কেবলা রচিত পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসীর বর্ণনা অনুযায়ী তাঁহার ৩৫ জন খলিফার নামফলক স্থাপন করেন। ফলে, সেইখানকার জেয়ারতকারীগণ বিশেষ ভাবে উপকৃত হইতেছেন।
এই নামফলক স্থাপনের পিছনে একটি বিশেষ কারণও ছিল। অনেকেই হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর মুরিদ-খলিফাগণ সম্পর্কে নানা প্রশ্ন উত্থাপন করিত। কেহ বলিত অমুক হযরত ওয়াইসী পীর রহ. এর এক নম্বর খলিফা, কেহ বলিত তিনি আদৌ খলিফাই নন। এই রূপ নানা বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে অনেকেই গুজব ছড়াইত। কিন্তু এখন তাহা পারিবে না। কেননা হযরত ওয়াইসী কেবলা রহ. স্ব-রচিত দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবে যেই ভাবে তাঁহার মুরিদ-খলিফাগণের নাম তালিকা প্রকাশ করিয়াছেন, উক্ত নামফলকে ঠিক একই ক্রমানুসারে মুরিদ-খলিফাগণের নাম তুলিয়া ধরা হইয়াছে।
।
ওয়াইসী পীর তোরণ
রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ. এর মাজার শরীফের পবিত্রতা রক্ষা এবং ভক্ত-অনুসারীগণ যাতে সহজে মাজার শরীফ চিনতে পারেন সে উদ্দেশ্যে হযরত খাজা আহমদীনূরী একক প্রচেষ্টায় কলিকাতায় হযরত ওয়াইসী কেবলার মাজার শরীফে প্রবেশ পথে রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী পীর তোরণ নির্মাণ করিয়াছেন। যা তাঁর আশেকী অন্তরের পরিচয় বহন করে। তিনি হযরত ওয়াইসী কেবলার এমনই একজন আশেক যিনি নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দ, আরাম-আয়েশের কথা না ভেবে নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে গিয়ে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করিয়াছেন। সেখানে নির্মাণ কাজ করার জন্য তিনি ১৯৯২ খ্রীষ্টাব্দে কলিকাতার উদ্দেশ্যে বিমানে যাত্রা করেন। অবশ্য রাজমিস্ত্রি ও সহযোগীদের পূর্ব্বেই স্থল পথে পাঠাইয়া দিয়াছিলেন। এই সকল কাজ করিবার পূর্ব্বে মূল মাজার শরীফ নির্মাণ করিবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করিতেছিলেন।
তিনি ভাবিতেছিলেন সুরেশ্বর মাজার শরীফের অনুকরণে মানিকতলায়ও মাজার শরীফ করিবেন। এই রূপ পরিকল্পনা করিতেছিলেন এমন সময় বিমানে তাঁহার অন্তরে ভাবোদয় হইল। এক ধরনের অস্থিরতা অনুভব করিতে থাকেন। এয়ার কন্ডিশন বিমানেও তাঁহার শরীর হইতে ঘাম বাহির হইতে থাকিল। তখন হযরত ওয়াইসী পাক রহ. তাঁহাকে ইঙ্গিত করিলেন, এখন তুমি গেইট, রাস্তা, নামফলকের কাজই কর। ভবিষ্যতে মাজার শরীফের কাজ করিতে চাহিলে বায়তুল মোকাদ্দাসের আদলে করিও। পরে তিনি চিন্তামুক্ত হইলেন।
কলিকাতা মানিকতলায় পৌঁছিয়া ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী জেনারেল ড. শেখ আহমদ আলী, তাঁহার মেঝ পুত্র আলহাজ্জ্ব সৈয়্যেদ শাহ্ নূরে আহমদ মোর্শেদ আলোশাহ্, রাজমিস্ত্রি ওয়ারেস উদ্দীন প্রমুখের সহযোগিতায় হযরত ওয়াইসী বাবাজান কেবলার পঁয়ত্রিশজন মুরিদ-খলিফার নামফলক স্থাপন করেন।
অতঃপর শেখ আহমদ আলীকে বলিলেন, এইখানে একটি গেটও প্রয়োজন। ইহাতে মাজার শরীফের সৌন্দর্য্য বাড়িবে, একই সঙ্গে মাজার শরীফের সীমানা সু-রক্ষা ও পবিত্রতা রক্ষায় সহায়ক হইবে। তাহারা সকলেই তাঁহাকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করিলেন। তাঁহার অন্তর হইতেই এই গেটের নাম আসে ‘হযরত ওয়াইসী পীর তোরণ’। ইহার নিচে লেখা তাঁহার অন্যতম বিশিষ্ট মুরিদ-খলিফা হযরত শাহ্ আহমদ আলী সুরেশ্বরী রহ. স্মরণে।
হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. গেট হইতে মাজার শরীফ পর্য্যন্ত মার্বেল পাথরের রাস্তা করিয়া দেন। তাঁহার এ সকল অনবদ্য অবদানের কারণে কলিকাতা ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশন তাঁহাকে ১৯৯৬ সালে হযরত ওয়াইসী এওয়ার্ডে ভূঁষিত করে।
।
জন্মভূমিতে ওয়াইসী পীর তোরণ
বাঙালীর সন্তান হইয়াও বিরল প্রতিভা ও সম্মানের অধিকারী রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ. সম্পর্কে অনেকেই সম্যক অবগত নন। তাঁহার মাজার শরীফ কলিকাতার মানিকতলায় অবস্থিত হওয়ায় অনেকেই জানেন না বা অনুমানও করেন না যে তিনি বাঙালীর সন্তান এবং বাংলাদেশেই তাঁহার জন্ম। এমনকি তাঁহার ভক্ত-অনুসারীগণের অনেকেই তাঁহার জন্মস্থান সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্ধকারে ছিল। কোন গ্রাম বা কোন বাড়ীতে তাঁহার জন্ম সে বিষয়ে সু-নির্দিষ্ট করে কেউ তথ্য দিতে পারিতেন না। অবশেষে দীর্ঘ গবেষণা ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে তাঁহার পবিত্র জন্মস্থানের পরিচয় উদঘাটন করা হইয়াছে।
চট্টগ্রাম জেলার বৃহত্তম সাতকানিয়া উপজেলার বর্তমান লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের মল্লিক সোবহান হাজির পাড়া গ্রামে হযরত ওয়াইসী কেবলার জন্মস্থান। যেখানে তাঁহার পূর্ব্ব পুরুষগণের বংশধরগণ এখনও বসবাস করিতেছেন।
ভক্ত-অনুসারী যাহারা এখানে জেয়ারতের উদ্দেশ্যে আসিতে চান তাহাদের চিনিবার সুবিধার্থে এবং মহান অলির মর্য্যাদা রক্ষার্থে এখানে একটি গেট নির্মাণ করা আবশ্যক মনে করিয়া হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের শুরুর দিকে সুদৃশ্য ‘রাসূলনোমা পীর আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ. তোরণ’ নামে একটি তোরণ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নির্মাণ কাজ আরম্ভ করেন।
প্রায় চার মাসের মধ্যে এই তোরণের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হইলে ২০১২ খ্রীষ্টাব্দের ৬ জুলাই ইহার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। হযরত ওয়াইসী পাক রহ.-এর প্র-পৌত্র আলহাজ্জ্ব হযরত শাহ সূফী ব্যারিষ্টার সৈয়্যেদ শাহীদ আলম মাঃজিঃআঃ তোরণটির শুভ উদ্বোধন করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ.-এর স্মৃতি রক্ষার্থে দরবারে আউলিয়া সুরেশ্বর দ্বায়রা শরীফের প্রধান গদিনশীন পীর আলহাজ্জ্ব খাজা শাহ সূফী সৈয়্যেদ নূরে আখতার হোসাইন আহমদীনূরী যে সকল কাজ করিয়াছেন তাহা সত্যিই প্রশংসনীয়।
হযরত শাহীদ আলম বলেন, খাজা আহমদীনূরী কেবল এই তোরণ নির্ম্মাণ করিয়াছেন, তাহাই নহে। তিনি আমার পিতা কেবলা সাবেক এটর্নী জেনারেল আলহাজ্জ্ব শাহ সূফী সৈয়্যেদ জানে আলম রহ.-এর বঙ্গানুবাদকৃত পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাব প্রকাশ করিয়াছেন।
তিনি বলেন, আমার প্র-পিতামহ হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর ভারতের কলিকাতায় অবস্থিত মাজার শরীফের সংস্কার, সৌন্দর্য্য বর্ধন, পুনঃনির্ম্মাণ, মাজার শরীফের প্রধান তোরণ, রাস্তা নির্ম্মাণ এবং সেখানে তাঁহার পঁয়ত্রিশ জন মুরিদ-খলিফার নামফলক নির্ম্মাণের কৃতিত্বও খাজা আহমদীনূরীর।
চট্টগ্রামে হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর পবিত্র জন্ম স্থানের মর্য্যাদা রক্ষায় নির্ম্মিত এই তোরণ তাঁহার ভক্ত-অনুসারীদের জেয়ারতকে সহজ করবে বলিয়াও অভিমত ব্যক্ত করেন হযরত শাহীদ আলম।
আওলাদে ওয়াইসী জনাবা রুসেলী রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এই মহতী অনুষ্ঠানে হযরত খাজা আহমদীনূরী ও তাঁহার সেজো পুত্র পীরজাদা সৈয়্যেদ শাহ নূরে এহসান মোর্শেদ নাহিনশাহ, হযরত সূফী ফতেহ আলী ওয়াইসী মহিলা মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্জ্ব মাওলানা শামসুদ্দীন, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক-গবেষক আহমদুল ইসলাম চৌধুরী, কলিকাতা হযরত ওয়াইসী মেমোরিয়াল এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী ড. শেখ আহমদ আলী, তাঁহার সফর সঙ্গী জুলফিকার শাহ, আমার মুরিদ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার মোল্লা, খলিফা মোঃ হেলাল খান, সাংবাদিক সিকদার আবদুস সালাম, দীপু, মন্টু, হাবিব, সালাম, সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
।
পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ
হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করিয়াছেন। ফার্সী ভাষায় রচিত মূল কিতাবখানির বঙ্গানুবাদ করা খুবই জরুরি হইয়াছিল। কেননা বর্ত্তমানে ফার্সী ভাষা চর্চা বহুলাংশে কমিয়া গিয়াছে। শায়খে তরিকত হযরত ওয়াইসী পীর রহ.-এর কোটি কোটি ভক্ত-অনুসারীর সুবিধার্থে কিতাব খানির বঙ্গানুবাদ অপরিহার্য্য হইয়া পড়ে। তাই বিভিন্ন সময়ে ওয়াইসী প্রেমিকগণ কিতাবখানি বঙ্গানুবাদের চেষ্টা করিয়াছেন। কেহ আংশিক কেহ পূর্ণাঙ্গ বঙ্গানুবাদ করিয়াছেন। আংশিক বঙ্গানুবাদকারীর সংখ্যাই বেশি। বঙ্গানুবাদ কার্য্যে যেই সকল মহা-মনীষী বিশেষ অবদান রাখিয়াছেন তাঁহাদের মধ্যে প্রথমেই আসে বাবা ওয়াইসী পীর কেবলার পৌত্র হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রহ.-এর নাম। তিনি পূর্ণাঙ্গ দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবের সার্থক বঙ্গানুবাদ করেন। পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের আরও যাঁহারা আংশিক বঙ্গানুবাদ করিয়াছেন এবং যতটা জানা যায়, তাঁহারা হইলেন: রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ.-এর প্রপৌত্র হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আবদুল মতিন জাহাঁগীর রহ.। কোন কারণ বশতঃ হয়তো তাঁহার বঙ্গানুবাদ এই পর্য্যন্ত প্রকাশিত হয় নাই। বহু ভাষাবিদ জ্ঞান তাপস ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আংশিক অনুবাদ প্রকাশ করিয়াছিলেন। দরবারে শাহে কদমী পাউসার শরীফের ভক্ত ও মুরিদ সিলেট নিবাসী হযরত মাওলানা শাহ্ সূফী হাবীবুর রহমান, সিরাজগঞ্জের আলহাজ্জ্ব দানেশ উদ্দিন ও অধ্যাপক মুহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন খান আংশিক বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করিয়াছেন।
পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের সার্থক বঙ্গানুবাদ করিয়াছেন হযরত ওয়াইসী পাক রহ.-এর পৌত্র আলহাজ্জ্ব হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ মুহাম্মদ জানে আলম রহ.। তিনি ব্যক্তি জীবনে একজন অভিজ্ঞ ন্যায়পরায়ণ ও গুণী আইনজীবী ছিলেন। তিনি ফার্সী ভাষায় অগাধ পা-িত্য অর্জন করেন। কর্ম্মময় জীবনে শত ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’র সফল অনুবাদ করিয়াছেন।
রাহমাতুল্লিল আলামীন সাইয়্যেদুল মুরসালিন খাতেমুন নাবিয়্যিন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা আহমদ মুজতবা সা., তাঁহার আহলে বাইত, সাহাবায়ে কেরাম, হাদিয়ে জামান কুতুবুল এরশাদ মাহবুবে সোবহানী কুতুবে রব্বানী পীরে মোকাম্মেল রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ., তাঁহার আওলাদগণ ও ৩৫ জন বিশিষ্ট মুরিদ ও খলিফা বিশেষতঃ কুতুবুল এরশাদ হাদিয়ে জামান শামসুল ওলামা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ আহমদ আলী ওরফে হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ জানশরীফ শাহ্ সুরেশ্বরী রহ.-এর অশেষ রহমত ও দয়ার কারণেই তিনি দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবের বঙ্গানুবাদটি প্রকাশ করিতে সমর্থ হইয়াছেন বলিয়া তিনি অভিমত ব্যক্ত করিয়াছেন।
হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. ২০শে অগ্রহায়ণ, মোতাবেক ৬ই ডিসেম্বর ২০০১ খ্রীষ্টাব্দে রাসূলনোমা আল্লামা হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর ১১৫তম পবিত্র ওফাত দিবস উপলক্ষে ফার্সী ভাষায় রচিত তাঁহার বিখ্যাত পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাব খানির বঙ্গানুবাদ প্রকাশ করেন।
।
৮০ বৎসর পর পবিত্র ‘দিওয়ানে ওয়াইসী’ কিতাবের ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশ
নবী করীম সা.কে নিবেদিত বিশ্বনন্দিত কাব্য গ্রন্থ সমূহের অন্যতম পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী। নবী প্রেমের অফুরন্ত ভাণ্ডার পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী কাব্য গ্রন্থটি মোর্শেদে আলম হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর বেসালে হকের দীর্ঘ ১২ বৎসর পর ১৮৯৮ খ্রীষ্টাব্দে প্রথম প্রকাশ করা হয়। ভারতের কলিকাতার গাউসিয়া প্রেস হইতে ইহা প্রকাশিত হইয়াছিল। অতঃপর ১৯২২ এবং ১৯৩৫ খ্রীষ্টাব্দে যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার কিতাব খানি প্রকাশিত হয়। ভারতবর্ষে বৃটিশ শাসনামলেই এই প্রেম ভাণ্ডার আলোর মুখ দেখিয়াছে। কিন্তু ১৯৪৭ এবং ১৯৭১ খ্রীষ্টাব্দের পরে অখণ্ড ভারত যথাক্রমে পৃথক দুইটি ও তিনটি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব লাভ করিলেও এতদাঞ্চলের কোন ওয়াইসী প্রেমিকের কিতাব খানির পুনঃ প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি না করিবার কারণ আল্লাহই ভাল জানেন। তৃতীয় প্রকাশের প্রায় সাড়ে পাঁচ যুগ পরে ১৯৯৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৭ জুন ভারতের কলিকাতা হইতে আশেকে ওয়াইসী ড. শেখ আহমদ আলী এই গ্রন্থখানি ফটোকপি করেন।
আশির দশকে হযরত ওয়াইসী রহ.-এর প্র-দৌহিত্র হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ আবুল বাশার মা.জি.আ.-এর মাধ্যমে অবগত হইয়া হযরত খাজা আহমদীনূরী মা.জি.আ. তাঁর এক মুরিদের মাধ্যমে ১৯৮৮ খ্রীষ্টাব্দের দিকে কলিকাতা হইতে পবিত্র দিওয়ানে ওয়াইসী সংগ্রহ করেন।
২০০০ খ্রীষ্টাব্দের ঘটনা। রাসূলনোমা হযরত ওয়াইসী পীর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ঢাকার খান্কায়ে সুরেশ্বরীতে হযরত ওয়াইসী পীর কেবলা রহ.-এর ওরোছ শরীফে অন্যান্য বৎসরের ন্যায় আওলাদে ওয়াইসী ব্যারিষ্টার শাহীদ আলম রহ. খানকায়ে সুরেশ্বরী, ঢাকায় আগমন করেন। হযরত আহমদীনূরী তাঁহাকে বিনয়ের সহিত হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ জানে আলম রহ.-এর অনুবাদটি আশেকানে ওয়াইসীগণের উদ্দেশ্যে প্রকাশের অনুমতি দেয়ার জন্য অনুরোধ জ্ঞাপন করেন।
হযরত শাহ্ সূফী সৈয়্যেদ শাহীদ আলম হুজুর তাঁহার বিনীত আবেদনে সাড়া দিয়া তাঁহার পিতা কেবলা কর্ত্তৃক অনূদিত মূল পাণ্ডুলিপি, টাইপকপি ও তাঁহার পিতা কেবলার আমলের মূল দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাব খানা তাঁহার হাতে অর্পণ করেন।
ফার্সী কিতাব খানা ছিল একেবারেই জীর্ণশীর্ণ। ঐ কিতাবের সাদা পাতা গুলি হলুদ বর্ণের হইয়া গিয়াছে। পাতার কোষ গুলি যেন মরিয়া গিয়াছে। উল্টালেই পাতার অংশ বিশেষ ভাজা পাপড়ের ন্যায় ভাঙ্গিয়া পড়িয়া যাইতেছিল। তা সত্ত্বেও নবী করীম সা.-এর অফুরন্ত এই প্রেম ভাণ্ডটি তিনি প্রকাশ করিবার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করিলেন।
মূল দিওয়ানে ওয়াইসী পুনঃ প্রকাশ করিবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর তিনি এক বিশেষ সমস্যার সম্মুখীন হন। জীর্ণশীর্ণ কিতাবটির পাতার অংশ বিশেষ ছিঁড়িয়া কোন কোন শব্দ বা অক্ষর বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। এমতাবস্থায় ইহার পুনঃ প্রকাশে কেবল একজন কম্পিউটার অপারেটরের উপর ভরসা না করিয়া মনে মনে তিনি ফার্সী ভাষা ও সাহিত্যে পারদর্শী একজনের সন্ধান করিতেছিলেন।
অতঃপর দয়াল বাবা রাসূলনোমা পীর হযরত শাহ সূফী সৈয়্যেদ ফতেহ আলী ওয়াইসী রহ. মাওলানা মীর আশরাফুল আলম এর সন্ধান দিলেন। তিনি একাধারে আলেম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ, গবেষক, লেখক, আলোচক ও ফার্সী ভাষা-সাহিত্যে পারদর্শী। দেশের পড়াশোনা শেষে ইরানের আল-মোস্তফা আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ইসলামী দর্শন ও আধ্যাত্মিকতার উপর সর্ব্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করিয়াছেন এই বিজ্ঞ আলেম। মাওলানাকে কিতাবটি পুনঃ প্রকাশে আমার আকাঙ্ক্ষার কথা জানাইলে তিনি সানন্দে সার্ব্বিক সহযোগিতা করিতে সম্মত হইলেন। প্রায় শত বৎসর পূর্ব্বের জীর্ণশীর্ণ দিওয়ানে ওয়াইসীর খোয়া যাওয়া হরফ ও শব্দ উদ্ধারসহ কম্পিউটার কম্পোজ, সংশোধন, অনুবাদ ও বিশ্লেষণের দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করিলেন।
মাওলানা আশরাফুল আলম অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সহিত এই সকল কাজ সম্পন্ন করেন। অতঃপর কিতাবের মেকআপ, সেটআপসহ আলঙ্কারিক কাজ ও প্রচ্ছদ ডিজাইন করিবার পর ২০১৫ খ্রীষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর হযরত ওয়াইসী কেবলা রহ. এর পবিত্র ফাতেহা শরীফের পবিত্রতম দিবসে গ্রন্থটির ৪র্থ সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশের পর দীর্ঘ প্রায় ৮০ বৎসর অতিবাহিত যখন দিওয়ানে ওয়াইসী কিতাবের একটি কপিও অবশিষ্ট ছিল না। মূল ফার্সী গ্রন্থ পাওয়াও দুরুহ হইয়াছিল। এমনই পরিস্থিতিতে হযরত খাজা আহমদীনূরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গ্রন্থটির চতূর্থ সংস্করণ প্রকাশিত হইয়াছে। যাহার ফলে এমন অমূল্য গ্রন্থ চিরতরে হারাইয়া যাওয়ার আশঙ্কা হইতে ওয়াইসী প্রেমিকগণ প্রশান্তি লাভ করিলেন।